ঢাকা ০২:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি/নোটিশ ::
সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||
সদ্য প্রাপ্ত খবর ::
দাখিল আকাইদ ও ফিকহ পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান ২০২৫ PDF bdnewspost.com এসএসসি কৃষি শিক্ষা বহুনির্বাচনি প্রশ্ন সমাধান ২০২৫ [ক,খ,গ ও ঘ সেট সব বোর্ড] – এসএসসি কৃষি শিক্ষা MCQ সমাধান 2025 PDF bdnewspost.com SSC Agriculture Research MCQ Query resolution 2025 – Krishi Shikkha Query & Solution 2025 All Board PDF bdnewspost.com বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি IDRA Activity Round 2025 bdnewspost.com রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি EPB Task Round 2025 bdnewspost.com এসএসসি গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বহুনির্বাচনি প্রশ্ন সমাধান ২০২৫ [ক,খ,গ ও ঘ সেট সব বোর্ড] – এসএসসি গার্হস্থ্য বিজ্ঞান MCQ সমাধান 2025 PDF bdnewspost.com পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিমিটেড নিয়োগ PGCB Process Round 2025 bdnewspost.com SSC House Science MCQ Query answer 2025 – Garostho Biggan Query & Resolution 2025 All Board PDF bdnewspost.com Dakhil Aqaid O Fiqh Query Solution 2025 – Dakhil Aqaid O Fiqh MCQ Query answer 2025 PDF Obtain bdnewspost.com এসএসসি কৃষি শিক্ষা বহুনির্বাচনি প্রশ্ন সমাধান ২০২৪ [ক,খ,গ ও ঘ সেট সব বোর্ড] – এসএসসি কৃষি শিক্ষা MCQ সমাধান 2024 PDF bdnewspost.com

যেভাবে চার হাত হয়ে ইলিশের দাম বাড়ে দেড়গুণ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৩:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪ ১২৫ বার পড়া হয়েছে


লক্ষ্মীপুর: নদী ও গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ শিকার করেন জেলেরা। সে ইলিশ সাধারণের পাতে উঠে কয়েক হাত হয়ে।

কিন্তু জাতীয় এ মাছের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় এখন এর স্বাদ ভুলতে বসেছেন অনেকে।  

বাজারে বর্তমানে এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজিদরে। আর আধা কেজি ওজনের ইলিশের কেজি হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। ২০০ থেকে আড়াইশ গ্রাম ওজনের জাটকা ইলিশের কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।  

এতো উচ্চমূল্যের রূপালী ইলিশ কিনে অনায়াসে মুখে তোলার সামর্থ্য নেই অনেকেরই। নিম্মবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্তেরও ধরাছোঁয়ার বাইরে ইলিশের দাম।

গত কয়েক বছর ধরে ইলিশের দাম হু হু করে বেড়েই চলছে। এর দাম বাড়ানোর পেছনে কার হাত রয়েছে, কেনই বা ইলিশের দাম এতো উচ্চতায় গিয়ে ঠেকেছে! চড়া দামে বিক্রি হওয়া ইলিশের কত টাকা ঢোকে জেলেদের পকেটে? জাতীয় এ মাছ বিক্রিতে লাভবান হচ্ছেন কারা? এছাড়া নদীতে কেন ইলিশের আকাল পড়েছে?- এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।  

উত্তরে জানা গেছে, জেলের জালে ওঠা রূপালী ইলিশ চার হাত হয়ে দাম বেড়ে যায় দেড়গুণ!

গিয়াস উদ্দিন মাঝির ট্রলার এক সপ্তাহ নদীতে মাছ শিকার করে ঘাটে ফিরেছে ইলিশ নিয়ে। লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের বাত্তিরখাল মাছঘাটে তিনি মাছ নিয়ে এসেছেন ডাকে বিক্রি করতে। তার ট্রলারের জেলেরা দুই দফায় ঘাটে ডাক তুলে দেড় লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেছেন আড়তে।

গিয়াস উদ্দিনের ট্রলারের জেলে মো. সবুজ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ তথ্য দেন।

তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তাদের ট্রলারে ১০ জন জেলে এবং একজন ট্রলার মাঝি রয়েছেন। সবার বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নে। দশ দিন আগে ট্রলার নিয়ে মজুচৌধুরীর হাট থেকে তারা মেঘনার গভীরে নোয়াখালীর হাতিয়া এলাকায় যান মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে তারা ১৫ হাজার টাকার চাল-ডালসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনেন। আর ট্রলারের জ্বালানি তেল (ডিজেল) কেনেন ৪০ হাজার টাকার। মোট ৫৫ হাজার টাকার খরচ হয়েছে তাদের। মাছ পেয়েছেন দেড় লাখ টাকার। অর্থাৎ ৯৫ হাজার টাকা ওই ট্রলারের লাভ। এবার লাভের অর্ধেক ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা পাবেন ট্রলারমালিক। বাকি ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা ১৩ ভাগে ভাগ হবে। দুইভাগ ট্রলারের মাঝির, একভাগ ট্রলার মালিকের এবং বাকি ১০ ভাগ ১০ জন জেলের। প্রতিভাগে পড়ে তিন হাজার ৬৫৩ টাকা করে। একজন জেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল নদীতে মাছ শিকার করে দৈনিক হাজিরা হিসেবে পেয়েছেন মাত্র সাড়ে তিনশত টাকার মতো। এখানে লাভের বড় একটি অংশ পেয়েছে ট্রলারমালিক।

এবার গিয়াস উদ্দিনের ট্রলারের মাছগুলো ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাতে মধ্যবর্তী স্থানে চার হাত হয়েছে। কারণ নদী বা সমুদ্র থেকে জেলেরা মাছ ধরে ঘাটে আনার পর সে মাছের নিয়ন্ত্রণ আর তাদের হাতে থাকে না। কিংবা জেলে বা ট্রলারমালিক ইচ্ছে করলেও সরাসরি বেপারী বা ক্রেতাদের কাছে মাছ বিক্রির ক্ষমতা রাখে না।

জেলে নৌকার মাছ সরাসরি চলে যায় মহাজনের বাক্সে। মহাজনের নিয়োজিত কর্মী প্রাথমিকভাবে একটি দাম নির্ধারণ করে ‘ডাক’ তোলেন। মাছের বাক্স ঘিরে ভিড় থাকে বেপারীদের। একের পর পর দাম হাঁকানোর পর যে কোনো একজন বেপারী সে মাছ কিনে নেন। এরপর তারা বিক্রি করে আড়তে বা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। খুচরা বিক্রেতাদের হাত হয়ে যায় ক্রেতাদের হাতে। মহাজন থেকে শুরু করে ক্রেতা পর্যন্ত যে চার হাত হয়েছে- তাদের প্রত্যেকেই শতকরা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লাভ করে থাকে। এভাবেই ঘাট থেকে শুরু করে খুচরা ক্রেতা পর্যন্ত নির্ধারণ হয় ইলিশের দাম।

সাগর থেকে ধরে আনা এক কেজি ওজনের দুটি ইলিশের ডাক উঠেছে। রতন বেপারী নামে এক ব্যবসায়ী দুটি ইলিশ কিনেছেন ২ হাজার ১৬০ টাকা দিয়ে। প্রতিটি ইলিশের দাম পড়েছে ১ হাজার ৭০ টাকা। ওই ইলিশ থেকে শতকরা ১০ টাকা হারে কমিশন নিয়েছেন বাক্সের মালিক বা মহাজন। রতন বেপারী খুচরা হিসেবে মাছ বিক্রি করেন না। তার মাছ চলে যায় পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে বা আড়তে। তিনিও মাছটি বিক্রি করার সময় ১০ শতাংশ লাভে অর্থাৎ ১ হাজার ১৭০ থেকে ১ হাজার ১৮০ টাকায় বিক্রি করবেন। আবার আড়ত থেকে ১০ শতাংশ লাভে মাছটি যাবে খুচরা ব্যবসায়ীর হাতে। এতে মাছটির দাম পড়বে ১ হাজার ৩০০ টাকার মতো। ওই মাছ খুচরা ব্যবসায়ীরা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লাভে বিক্রি করলেও দাম পড়বে ১ হাজার ৫০০ টাকার মতো। কিংবা বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দাম হাঁকাবেন বিক্রেতারা। এতে দেখা দেখা যায়, ঘাটের ইলিশ বাজারে আসতে হাত বদল হয়ে দাম বেড়ে যায় দেড়গুণ।  

তবে স্বাদের তারতম্য থাকায় সাগরের ইলিশ তুলনামূলক নদীর ইলিশের থেকেও কিছুটা দাম কম। নদীর বড় ইলিশের কেজি ঘাটেই ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বাজারে ওই ইলিশের দাম পড়বে দুই হাজারের উপরে।  

এদিকে ইলিশের বর্তমান উচ্চমূল্যের জন্য জেলে, মহাজন, বেপারী, আড়তদার এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা দায়ী করেছেন নদীতে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়াকে।

জেলে নুর ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশের দাম এখন অনেক বেশি। তারপরেও আমাদের পোষায় না৷ কারণ, এখন নদীতে মাছ কম। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বেশি। সে হিসেবে মাছ শিকারের খরচ বেশি পড়ছে। নদীতে মাছের পরিমাণ বেশি হলে কম দামে বিক্রি করলেও আমরা লাভবান হতাম।  

কমলনগরের বাত্তির খাল মাছঘাটে মাছ বিক্রি করতে আসা বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ এলাকার জেলে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ছয়জন জেলে যে মাছ শিকার করেছি, তা ঘাটে বিক্রি করে সাত হাজার ৭০০ টাকা পেয়েছি। কিন্তু আমাদের খরচ হয়েছে চার হাজার টাকার বেশি। খরচ বাদ দিয়ে যে টাকা থাকবে তা সাতভাগ করতে হবে।

নুর উদ্দিন নামে এক জেলে বলেন, নদীতে মাছ কম থাকায় কখনো কখনো আমাদের খরচও উঠে না।

এসব জেলেরা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে নদীতে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। কিন্তু ঘাটে কিংবা বাজারে ইলিশের অনেক চাহিদা থাকায় দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আবার দাম বেশি হলেও তাদের পোষায় না দাবি জেলেদের। তারা জানায়, ডিজেলের দাম বেড়েছে। তাই মাছ শিকারের খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাত্তির খাল মাঠঘাটে মাছ কিনতে আসা বেপারী মো. সবুজ বলেন, আগের থেকেও এখন মাছের দাম বেশি। আমরা ঘাট থেকে দামে মাছ কিনি। তার থেকে ১০ শতাংশ লাভে খুচর বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। চাঁদপুরের মৎস্য আড়ত এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে মাছ কিনে খোলা বাজারে বিক্রি করেন।

তিনি জানান, বাজারে মাছের চাহিদা আছে। কিন্তু সে হিসেবে নদীতে বা ঘাটে মাছ নেই। তাই সংকট থাকলেও দাম যতই হোক, ক্রেতা পাওয়া যায়।

বাত্তিরখাল মাছঘাট আড়তদার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ঘাটের বেশিরভাগ মাছ চাঁদপুর এবং ঢাকার কাওরান বাজারে সরবরাহ করা হয়। বিদেশে এলসি হলেও আড়তদাররা এখান থেকে মাছ কেনে। স্থানীয় বাজারেও এখানকার মাছ বিক্রি হয়। মাছের চাহিদা থাকলেও আমরা সে অনুযায়ী সরবরাহ দিতে পারছি না। নদীতে মাছ কম, জেলেরা যে মাছ পায় তা বিক্রি করে পোষায় না। তাই দাম সেভাবে নির্ধারণ করা হয়।

তিনি জানান, বাজারে, আড়তে কিংবা এলসি (রপ্তানি) করার জন্য যখন মাছের চাহিদা বাড়ে, তখন মোকাম (বড় আড়ত বা বাজার) থেকে একটা দাম ধরে দেওয়া হয়।  সে দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা ঘাটে প্রাথমিকভাবে দাম নির্ধারণ করি। আবার জেলেদের মাছ শিকারে কি পরিমাণ খরচ পড়ে, সে বিষয়টাও আমরা বিবেচনা করি।

এতে দেখা গেছে, জেলেরা মাছ শিকার করলেও তাদের মাছের দাম নির্ধারণ করে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

নদীতে ইলিশ কেন কমেছে?

লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী ছিল ইলিশে ভরপুর। বিশেষ করে ২০০০ সালের আগে জেলেরা ছোট ছোট ডিঙি নৌকা দিয়ে উপকূলের খুব কাছে অবস্থান নিয়ে মাছ শিকারে যেত। কিন্তু ২০-২৫ বছরের ব্যবধানে নদীতে মাছ কমতে শুরু করে। উপকূলের কাছাকাছি নদীতে অনেকটা মাছ শূন্য হয়ে পড়ে। এবার জেলেরা ডিঙি নৌকা বাদ দিয়ে ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা বা ট্রলার নিয়ে গভীর নদীতে মাছ শিকারে নেমে পড়েছেন। আবার কোনো কোনো জেলে বেশি মাছের আশায় গভীর সমুদ্রেও চলে যান। কিন্তু গভীর নদীতেও এখন আর মাছ পাওয়া যায় না।

মৎস্যজীবী, মৎস্য কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছে, ইলিশ গভীর জলের মাছ। পানির পরিমাণ যত বেশি হবে, ইলিশের বিচরণ তত বাড়বে। কিন্তু নদীর গভীরতা দিন দিন কমছে। ফলে মাছের বিচরণ কমে গেছে। সমুদ্রে ইলিশ থাকলেও সে মাছ এখন আর নদীতে আসতে পারে না।  

এর কারণ হিসেবে তারা নদীর গভীরতা বা নাব্য সংকটকে দায়ী করছেন। পাহাড়ি উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির সঙ্গে প্রতিনিয়ত পলিমাটি এসে নদী ভরাট হচ্ছে। আবার উপকূলীয় এলাকা ভাঙনের ফলে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গভীরতা কমছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলেও নদীর গভীরতা কমছে। নৌযানের কারণেও দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। এসব কারণে গভীর সমুদ্র থেকে এখন আর নদীতে মাছ আসতে পারছে না।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েকদিনের থেকে এখন ইলিশ কিছুটা বেশি ধরা পড়ছে। যদিও ভরা মৌসুম হিসেবে সেটা আশানুরূপ নয়। বড় মাছের চেয়েও ছোট মাছের পরিমাণটাই বেশি।

তিনি বলেন, যেসব পথ দিয়ে সমুদ্র থেকে ইলিশ মেঘনা নদীতে আসে, ওইসব পথে ডুবোচর রয়েছে। এ কারণে মাছের গতিপথ বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এছাড়া নদীর গভীরতা কমে গেছে। ইলিশ গভীর পানিতে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডুবোচরগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কাজ করছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২৪
এসএএইচ
 




নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

যেভাবে চার হাত হয়ে ইলিশের দাম বাড়ে দেড়গুণ

আপডেট সময় : ০৫:৩৩:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪


লক্ষ্মীপুর: নদী ও গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ শিকার করেন জেলেরা। সে ইলিশ সাধারণের পাতে উঠে কয়েক হাত হয়ে।

কিন্তু জাতীয় এ মাছের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় এখন এর স্বাদ ভুলতে বসেছেন অনেকে।  

বাজারে বর্তমানে এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজিদরে। আর আধা কেজি ওজনের ইলিশের কেজি হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। ২০০ থেকে আড়াইশ গ্রাম ওজনের জাটকা ইলিশের কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।  

এতো উচ্চমূল্যের রূপালী ইলিশ কিনে অনায়াসে মুখে তোলার সামর্থ্য নেই অনেকেরই। নিম্মবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্তেরও ধরাছোঁয়ার বাইরে ইলিশের দাম।

গত কয়েক বছর ধরে ইলিশের দাম হু হু করে বেড়েই চলছে। এর দাম বাড়ানোর পেছনে কার হাত রয়েছে, কেনই বা ইলিশের দাম এতো উচ্চতায় গিয়ে ঠেকেছে! চড়া দামে বিক্রি হওয়া ইলিশের কত টাকা ঢোকে জেলেদের পকেটে? জাতীয় এ মাছ বিক্রিতে লাভবান হচ্ছেন কারা? এছাড়া নদীতে কেন ইলিশের আকাল পড়েছে?- এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।  

উত্তরে জানা গেছে, জেলের জালে ওঠা রূপালী ইলিশ চার হাত হয়ে দাম বেড়ে যায় দেড়গুণ!

গিয়াস উদ্দিন মাঝির ট্রলার এক সপ্তাহ নদীতে মাছ শিকার করে ঘাটে ফিরেছে ইলিশ নিয়ে। লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের বাত্তিরখাল মাছঘাটে তিনি মাছ নিয়ে এসেছেন ডাকে বিক্রি করতে। তার ট্রলারের জেলেরা দুই দফায় ঘাটে ডাক তুলে দেড় লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেছেন আড়তে।

গিয়াস উদ্দিনের ট্রলারের জেলে মো. সবুজ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ তথ্য দেন।

তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তাদের ট্রলারে ১০ জন জেলে এবং একজন ট্রলার মাঝি রয়েছেন। সবার বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নে। দশ দিন আগে ট্রলার নিয়ে মজুচৌধুরীর হাট থেকে তারা মেঘনার গভীরে নোয়াখালীর হাতিয়া এলাকায় যান মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে তারা ১৫ হাজার টাকার চাল-ডালসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনেন। আর ট্রলারের জ্বালানি তেল (ডিজেল) কেনেন ৪০ হাজার টাকার। মোট ৫৫ হাজার টাকার খরচ হয়েছে তাদের। মাছ পেয়েছেন দেড় লাখ টাকার। অর্থাৎ ৯৫ হাজার টাকা ওই ট্রলারের লাভ। এবার লাভের অর্ধেক ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা পাবেন ট্রলারমালিক। বাকি ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা ১৩ ভাগে ভাগ হবে। দুইভাগ ট্রলারের মাঝির, একভাগ ট্রলার মালিকের এবং বাকি ১০ ভাগ ১০ জন জেলের। প্রতিভাগে পড়ে তিন হাজার ৬৫৩ টাকা করে। একজন জেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল নদীতে মাছ শিকার করে দৈনিক হাজিরা হিসেবে পেয়েছেন মাত্র সাড়ে তিনশত টাকার মতো। এখানে লাভের বড় একটি অংশ পেয়েছে ট্রলারমালিক।

এবার গিয়াস উদ্দিনের ট্রলারের মাছগুলো ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাতে মধ্যবর্তী স্থানে চার হাত হয়েছে। কারণ নদী বা সমুদ্র থেকে জেলেরা মাছ ধরে ঘাটে আনার পর সে মাছের নিয়ন্ত্রণ আর তাদের হাতে থাকে না। কিংবা জেলে বা ট্রলারমালিক ইচ্ছে করলেও সরাসরি বেপারী বা ক্রেতাদের কাছে মাছ বিক্রির ক্ষমতা রাখে না।

জেলে নৌকার মাছ সরাসরি চলে যায় মহাজনের বাক্সে। মহাজনের নিয়োজিত কর্মী প্রাথমিকভাবে একটি দাম নির্ধারণ করে ‘ডাক’ তোলেন। মাছের বাক্স ঘিরে ভিড় থাকে বেপারীদের। একের পর পর দাম হাঁকানোর পর যে কোনো একজন বেপারী সে মাছ কিনে নেন। এরপর তারা বিক্রি করে আড়তে বা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। খুচরা বিক্রেতাদের হাত হয়ে যায় ক্রেতাদের হাতে। মহাজন থেকে শুরু করে ক্রেতা পর্যন্ত যে চার হাত হয়েছে- তাদের প্রত্যেকেই শতকরা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লাভ করে থাকে। এভাবেই ঘাট থেকে শুরু করে খুচরা ক্রেতা পর্যন্ত নির্ধারণ হয় ইলিশের দাম।

সাগর থেকে ধরে আনা এক কেজি ওজনের দুটি ইলিশের ডাক উঠেছে। রতন বেপারী নামে এক ব্যবসায়ী দুটি ইলিশ কিনেছেন ২ হাজার ১৬০ টাকা দিয়ে। প্রতিটি ইলিশের দাম পড়েছে ১ হাজার ৭০ টাকা। ওই ইলিশ থেকে শতকরা ১০ টাকা হারে কমিশন নিয়েছেন বাক্সের মালিক বা মহাজন। রতন বেপারী খুচরা হিসেবে মাছ বিক্রি করেন না। তার মাছ চলে যায় পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে বা আড়তে। তিনিও মাছটি বিক্রি করার সময় ১০ শতাংশ লাভে অর্থাৎ ১ হাজার ১৭০ থেকে ১ হাজার ১৮০ টাকায় বিক্রি করবেন। আবার আড়ত থেকে ১০ শতাংশ লাভে মাছটি যাবে খুচরা ব্যবসায়ীর হাতে। এতে মাছটির দাম পড়বে ১ হাজার ৩০০ টাকার মতো। ওই মাছ খুচরা ব্যবসায়ীরা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লাভে বিক্রি করলেও দাম পড়বে ১ হাজার ৫০০ টাকার মতো। কিংবা বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দাম হাঁকাবেন বিক্রেতারা। এতে দেখা দেখা যায়, ঘাটের ইলিশ বাজারে আসতে হাত বদল হয়ে দাম বেড়ে যায় দেড়গুণ।  

তবে স্বাদের তারতম্য থাকায় সাগরের ইলিশ তুলনামূলক নদীর ইলিশের থেকেও কিছুটা দাম কম। নদীর বড় ইলিশের কেজি ঘাটেই ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বাজারে ওই ইলিশের দাম পড়বে দুই হাজারের উপরে।  

এদিকে ইলিশের বর্তমান উচ্চমূল্যের জন্য জেলে, মহাজন, বেপারী, আড়তদার এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা দায়ী করেছেন নদীতে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়াকে।

জেলে নুর ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশের দাম এখন অনেক বেশি। তারপরেও আমাদের পোষায় না৷ কারণ, এখন নদীতে মাছ কম। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বেশি। সে হিসেবে মাছ শিকারের খরচ বেশি পড়ছে। নদীতে মাছের পরিমাণ বেশি হলে কম দামে বিক্রি করলেও আমরা লাভবান হতাম।  

কমলনগরের বাত্তির খাল মাছঘাটে মাছ বিক্রি করতে আসা বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ এলাকার জেলে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ছয়জন জেলে যে মাছ শিকার করেছি, তা ঘাটে বিক্রি করে সাত হাজার ৭০০ টাকা পেয়েছি। কিন্তু আমাদের খরচ হয়েছে চার হাজার টাকার বেশি। খরচ বাদ দিয়ে যে টাকা থাকবে তা সাতভাগ করতে হবে।

নুর উদ্দিন নামে এক জেলে বলেন, নদীতে মাছ কম থাকায় কখনো কখনো আমাদের খরচও উঠে না।

এসব জেলেরা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে নদীতে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। কিন্তু ঘাটে কিংবা বাজারে ইলিশের অনেক চাহিদা থাকায় দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আবার দাম বেশি হলেও তাদের পোষায় না দাবি জেলেদের। তারা জানায়, ডিজেলের দাম বেড়েছে। তাই মাছ শিকারের খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাত্তির খাল মাঠঘাটে মাছ কিনতে আসা বেপারী মো. সবুজ বলেন, আগের থেকেও এখন মাছের দাম বেশি। আমরা ঘাট থেকে দামে মাছ কিনি। তার থেকে ১০ শতাংশ লাভে খুচর বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। চাঁদপুরের মৎস্য আড়ত এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে মাছ কিনে খোলা বাজারে বিক্রি করেন।

তিনি জানান, বাজারে মাছের চাহিদা আছে। কিন্তু সে হিসেবে নদীতে বা ঘাটে মাছ নেই। তাই সংকট থাকলেও দাম যতই হোক, ক্রেতা পাওয়া যায়।

বাত্তিরখাল মাছঘাট আড়তদার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ঘাটের বেশিরভাগ মাছ চাঁদপুর এবং ঢাকার কাওরান বাজারে সরবরাহ করা হয়। বিদেশে এলসি হলেও আড়তদাররা এখান থেকে মাছ কেনে। স্থানীয় বাজারেও এখানকার মাছ বিক্রি হয়। মাছের চাহিদা থাকলেও আমরা সে অনুযায়ী সরবরাহ দিতে পারছি না। নদীতে মাছ কম, জেলেরা যে মাছ পায় তা বিক্রি করে পোষায় না। তাই দাম সেভাবে নির্ধারণ করা হয়।

তিনি জানান, বাজারে, আড়তে কিংবা এলসি (রপ্তানি) করার জন্য যখন মাছের চাহিদা বাড়ে, তখন মোকাম (বড় আড়ত বা বাজার) থেকে একটা দাম ধরে দেওয়া হয়।  সে দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা ঘাটে প্রাথমিকভাবে দাম নির্ধারণ করি। আবার জেলেদের মাছ শিকারে কি পরিমাণ খরচ পড়ে, সে বিষয়টাও আমরা বিবেচনা করি।

এতে দেখা গেছে, জেলেরা মাছ শিকার করলেও তাদের মাছের দাম নির্ধারণ করে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

নদীতে ইলিশ কেন কমেছে?

লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী ছিল ইলিশে ভরপুর। বিশেষ করে ২০০০ সালের আগে জেলেরা ছোট ছোট ডিঙি নৌকা দিয়ে উপকূলের খুব কাছে অবস্থান নিয়ে মাছ শিকারে যেত। কিন্তু ২০-২৫ বছরের ব্যবধানে নদীতে মাছ কমতে শুরু করে। উপকূলের কাছাকাছি নদীতে অনেকটা মাছ শূন্য হয়ে পড়ে। এবার জেলেরা ডিঙি নৌকা বাদ দিয়ে ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা বা ট্রলার নিয়ে গভীর নদীতে মাছ শিকারে নেমে পড়েছেন। আবার কোনো কোনো জেলে বেশি মাছের আশায় গভীর সমুদ্রেও চলে যান। কিন্তু গভীর নদীতেও এখন আর মাছ পাওয়া যায় না।

মৎস্যজীবী, মৎস্য কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছে, ইলিশ গভীর জলের মাছ। পানির পরিমাণ যত বেশি হবে, ইলিশের বিচরণ তত বাড়বে। কিন্তু নদীর গভীরতা দিন দিন কমছে। ফলে মাছের বিচরণ কমে গেছে। সমুদ্রে ইলিশ থাকলেও সে মাছ এখন আর নদীতে আসতে পারে না।  

এর কারণ হিসেবে তারা নদীর গভীরতা বা নাব্য সংকটকে দায়ী করছেন। পাহাড়ি উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির সঙ্গে প্রতিনিয়ত পলিমাটি এসে নদী ভরাট হচ্ছে। আবার উপকূলীয় এলাকা ভাঙনের ফলে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গভীরতা কমছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলেও নদীর গভীরতা কমছে। নৌযানের কারণেও দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। এসব কারণে গভীর সমুদ্র থেকে এখন আর নদীতে মাছ আসতে পারছে না।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েকদিনের থেকে এখন ইলিশ কিছুটা বেশি ধরা পড়ছে। যদিও ভরা মৌসুম হিসেবে সেটা আশানুরূপ নয়। বড় মাছের চেয়েও ছোট মাছের পরিমাণটাই বেশি।

তিনি বলেন, যেসব পথ দিয়ে সমুদ্র থেকে ইলিশ মেঘনা নদীতে আসে, ওইসব পথে ডুবোচর রয়েছে। এ কারণে মাছের গতিপথ বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এছাড়া নদীর গভীরতা কমে গেছে। ইলিশ গভীর পানিতে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডুবোচরগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কাজ করছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২৪
এসএএইচ