ঢাকা ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি/নোটিশ ::
সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||
সদ্য প্রাপ্ত খবর ::
বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স কার্গো হেলপার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি BBAL Shipment Helper Process Round 2024 bdnewspost.com সামরিক ভূমি ও ক্যান্টনমেন্ট অধিদপ্তরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি DMLC Task Round 2024 bdnewspost.com ১১তম বেলটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ধারণা ও কাঠামোর পুনর্গঠন নিয়ে দেশে অনুষ্ঠিত bdnewspost.com মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি DC Place of work Process 2024 bdnewspost.com শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি EEDMOE Activity Round 2025 bdnewspost.com চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি CJM Task Round 2024 bdnewspost.com মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি DME Activity Round 2024 bdnewspost.com ওয়ার্ল্ড ম্যাথ টিম চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের রৌপ্যপদকঃ দেশের জন্য বিরল গৌরব বয়ে আনলো গ্লেনরিচের আয়ান bdnewspost.com বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি BCSIR task round 2024 bdnewspost.com বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি bsmrmu Activity Round 2024 bdnewspost.com

নিষেধাজ্ঞার পরেও যেভাবে সামরিক শক্তি অর্জন করেছে ইরান

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৪২:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪ ৮২ বার পড়া হয়েছে


মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ক্রমাগত ভয়াবহ অবনতির দিকে যাচ্ছে। সম্প্রতি ইসরায়েলে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। একে ইসরায়েলের অপরাধের ‘ন্যূনতম শাস্তি’ বলে উল্লেখ করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

এই হামলার কৌশলগত দিক বিশ্লেষণ করে আমেরিকার ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার বলছে, এত বেশি সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র এমনভাবে ছোড়া হয়েছে যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চাপে ফেলেছে। ইসরায়েলি বাহিনী সবার আগে ঘনবসতি এলাকায় হামলা ঠেকাতে চেয়েছে এবং তুলনামূলক কম ঘনবসতি এলাকা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

এজন্য বেশ কয়েকটি বিমানঘাঁটি যেগুলো তুলনামূলক কম ঘনবসতি এলাকায় সেগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি ইসরায়েল। তেল আবিবের কাছে গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দফতরের কাছেও আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র।

তেহরান এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জুলাই মাসে তেহরানে হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়েকে হত্যা এবং বৈরুতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাকে হত্যার জবাব দিতে এই হামলা চালিয়েছে তারা।

আগে থেকেই ইসরায়েল বা আমেরিকার জন্য একটা বড় মাথাব্যথার জায়গা ছিল ইরান। লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি অথবা সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্ত্রশস্ত্রের পেছনে ইরানের সম্পৃক্ততার কথা এসেছে বারবার।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনী বা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ ছিল অনেক আগে থেকেই। আয়রন ডোমসহ শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও ইরানের হামলা পুরোপুরি ঠেকাতে পারেনি ইসরায়েল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বহু ধরনের নিষেধাজ্ঞায় থাকা ইরান কীভাবে অস্ত্র পাচ্ছে বা তৈরি করছে তাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইরানের বর্তমান অস্ত্রের সক্ষমতার পেছনে যেসব বিষয় কাজ করেছে সেটা জানতে একটু পেছন থেকে শুরু করতে হবে।

ইরানের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের পুরোনো। তবে আধুনিক সেনাবাহিনী বা অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার শুরুটা হয়েছিল রেজা খান বা রেজা শাহ পাহলভির হাত ধরে। তিনি ১৯২০ এর দশকে সেনাকমান্ডার থেকে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ও রাজা হয়েছিলেন।

সামরিক বাহিনীর কমান্ডার হওয়ার পর তিনি আরতেশ বাহিনী গঠন করেন যেটাকে আধুনিক এক সশস্ত্র বাহিনীর সূচনা হিসেবে দেখা হয়। তিনি ইরানকে একটি আঞ্চলিক শক্তিতে রূপান্তর করতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি হাজারো অফিসারকে বিদেশে মিলিটারি একাডেমিতে পাঠিয়েছিলেন, পাশাপাশি নিজ দেশের বাহিনীকে বড় করতে থাকেন এবং তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পশ্চিমা অফিসারও নিয়োগ দেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ইরানের দখল নেয়। নাৎসি জার্মানির সঙ্গে সুসম্পর্কের জেরে রেজা শাহকে সরিয়ে রাজার আসনে আনা হয় তার পুত্র মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে, যিনি শাসনকালের প্রায় পুরোটা সময় পশ্চিমাপন্থি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

পশ্চিমাদের নজর ছিল ইরানের তেলের দিকে। তেলের টাকায় ৬০ থেকে ৭০ দশকজুড়ে মূলত আমেরিকা থেকে বহু আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কেনা হয়। মোহাম্মদ রেজা পাহলভি দেশকে আধুনিকায়ন করতে উদ্যোগ নিলেও জনবিচ্ছিন্নতা, একনায়কতন্ত্র এমন নানা প্রেক্ষাপটে বিপ্লবের সূচনা হয়। দাঙ্গা, ধর্মঘট আর বিক্ষোভের বাস্তবতায় দেশ ছেড়ে পালাতে হয় শাহ ও তার পরিবারকে। তবে তার অস্ত্র কেনা, সামরিক প্রশিক্ষণ, এমন নানা পদক্ষেপের কারণে ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের সময় ইরানের বাহিনী ছিল সে অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর একটি।

ইরানের সামরিক শক্তির ইতিহাস ও সক্ষমতার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে আমেরিকার ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির প্রতিবেদনে।

ইসলামি বিপ্লবের সাথে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির প্রত্যাবর্তন বা উত্থানেও সমস্যা ছিল না, সমস্যা বাঁধে কয়েক মাসের মাথায় যখন তার অনুগত একদল শিক্ষার্থী তেহরানে মার্কিন দূতাবাসের দখল নিয়ে ৫২ জন আমেরিকানকে জিম্মি করে। তাদের দাবি ছিল, দেশান্তরী শাহকে বিচারের জন্য তেহরানে আনা। ৪৪৪ দিন স্থায়ী হওয়া এই সংকটের জেরে ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্র।

ইরান সেসময় অনেকটা একঘরে এবং সামরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। সেটাকেই ‘প্রথম অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা’ বলা যায় যার জেরে তখন পর্যন্ত বাকি থাকা অস্ত্রের সরবরাহ আর পায়নি ইরান। শাহ পাহলভির রেখে যাওয়া সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ড কর্পস বা বিপ্লবী বাহিনী গড়ে তোলা হয় আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে।

১৯৮০ সালে ইরানে ইরাক হামলা চালায়। প্রাথমিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও ধীরে ধীরে পেশাদারিত্ব বাড়তে থাকে নব্য গঠিত বিপ্লবী গার্ডের। ১৯৮২ সালে সাদ্দাম হোসেনের বাহিনীকে হটিয়ে পাল্টা হামলা করে ইরান।

সামরিক ও ইরান বিষয়ক বিশ্লেষক এবং কানাডার রয়্যাল মিলিটারি কলেজের একজন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. হুশ্যাং হাসান ইয়ারি বলেন, প্রথমদিকে আগেরকার মার্কিন অস্ত্র দিয়ে মোকাবেলা করলেও যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকলে এক পর্যায়ে জোড়াতালি দেওয়া শুরু করতে হয়। যেমন একটি ফাইটার এফ-ফোরটিনের যন্ত্রাংশ আরেকটায় লাগিয়ে কাজ চালাতে হয়েছিল।

লিবিয়া থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি স্কাড মিসাইল ও যন্ত্রাংশ এনে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে কীভাবে বানানো হয়েছে, সেটা দেখে নিজেরা বানানোর চেষ্টা করেছিল ইরান। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যানও গোপনে কিছু অস্ত্র বিক্রি করে যা কন্ট্রা স্ক্যান্ডাল নামে পরিচিত। উত্তর কোরিয়া থেকেও ক্ষেপণাস্ত্র নেওয়া হয়। ধীরে ধীরে এগুলোর সাথে নানা গবেষণা চালিয়ে প্রয়োজন মেটাতে থাকে এবং তারা অবৈধভাবে বাইরে থেকে অস্ত্র আনার একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ঢুকে যায়।

১৯৮৮ সালে যথেষ্ট সমর্থন এবং রসদের অভাবে যুদ্ধবিরতিতে যেতে বাধ্য হলেও যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে ইরানের সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা নীতিতে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা, যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি, সব মিলিয়ে পরবর্তী দশকগুলোতে স্বনির্ভরতা ও যুদ্ধের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ হয় ইরান।

বিপ্লব এবং ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে বলে উল্লেখ করেন বিবিসি পার্সিয়ান সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক পারহাম ঘোবাদিও। বিশেষত ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইলের বিষয়ে বেশি জোর দেওয়া হয় এবং এজন্য উত্তর কোরিয়া, চীনা এবং রাশিয়ানদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে থাকে এবং নিজেরাই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে থাকে ইরান।

৯০-এর দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শিয়া গোষ্ঠী আর বিভিন্ন দিকে সম্ভাব্য মিত্রদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক শক্ত করতে থাকে ইরান। চার দশকের বেশি সময় ধরে বহু ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসে দেশটির ওপর। শুধুমাত্র জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইরান সংশ্লিষ্ট ছয় শতাধিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা।

বর্তমান সক্ষমতা এবং এর উৎস
ইসরায়েলের এবারের হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যেটি অনেক কম সময়ে আঘাত হানতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, এগুলো ঠেকানো কিছুটা কঠিন কারণ এর গতি।

এপ্রিল মাসে ইসরায়েলে ইরান যে হামলা করেছিল সে তুলনায় এটি একটি বড় পার্থক্যের জায়গা বলে উল্লেখ করেন ঘোবাদি। আগেকার হামলায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোনের মতো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।

যেখানে ড্রোন ইসরায়েলে পৌঁছাতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় নেয় সে তুলনায় এবারকার হামলায় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের দাবি করেছে ইরান যেটা ইসরায়েলে পৌঁছাতে গড়পড়তা দশ মিনিটের মতো সময় লাগে বলে উল্লেখ করেন পারহাম ঘোবাদি। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের মতো দূরত্ব এত কম সময়ে পাড়ি দেওয়ায় আগের তুলনায় বেশি আঘাত হানতে পেরেছে বলে মনে করেন তিনি।

শুধু ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে দেখলেও ইরানের স্বল্প ও দূরপাল্লার বিভিন্ন ধরনের মিসাইল রয়েছে। যেমন শাহাব-৩ দুই হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত পাড়ি দিতে সক্ষম অর্থাৎ ইসরায়েল পার করে মিশর, অন্যদিকে ইউরোপ, রাশিয়া, ভারত বা চীন পর্যন্তও যেতে পারে এসব ক্ষেপণাস্ত্র।

ইরানের অস্ত্র সরঞ্জামের বড় যোগানদাতা রাশিয়া হলেও ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকেই নিজেদের তৈরি ড্রোন দিয়েছে ইরান।

অনেকে বলেন, ইরান যদি একবার কিছু একটা দেখার সুযোগ পায় এবং মনে করে তাদের জন্য এটা ভালো হতে পারে তাহলে সেটা তারা বানিয়ে ফেলতে পারে। কয়েক বছর আগে আমেরিকার ড্রোন ভূপাতিত করার পর তারা ড্রোন বানাতে থাকে এবং এখন ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি তাদের প্রতিরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ড্রোন।

তবে ইরানের আধা-সরকারি সংবাদমাধ্যম আইএসএনএর এপ্রিল মাসের একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স আরও বেশ কিছু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের তথ্য উল্লেখ করেছে। যেমন হাজ কাসেম ১৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে, খেইবার ২০০০ কিলোমিটার এবং সেজিল ২৫০০ কিলোমিটার, যেটি ঘণ্টায় ১৭ হাজার কিলোমিটারের বেশি গতিতে ছুটতে সক্ষম।

মধ্যপ্রাচ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা ইরানের সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বহু ধরনের মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্রের বহর ছাড়াও অনেক ধরনের অস্ত্রসম্ভার রয়েছে ইরানের।

সেনাবাহিনীর রয়েছে অনেক ধরনের বন্দুক, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান, রকেট লঞ্চারের মতো অস্ত্র। নৌবাহিনীর রয়েছে অনেক ধরনের ছোট-বড় রণতরী, নেভাল মাইন বা বিস্ফোরক, ডুবোজাহাজ, হেলিকপ্টারবাহী তরী এবং টহল জাহাজ।

বিমান বাহিনীর আছে হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান ও বহু ধরনের ড্রোন। সাইবার শক্তিও যথেষ্ট উন্নত করেছে ইরান। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ করার দিক তো ছিলই, যেটা নিয়ে সম্প্রতি জো বাইডেনও জানিয়েছেন ইরানে কোনও পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা তিনি সমর্থন করেন না।

নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর বহরকে তুলনামূলক পুরোনো ধাঁচের বা কম সক্ষম হিসেবে দেখা হলেও মঙ্গলবারের হামলা থেকে বোঝা যাচ্ছে তাদের হামলা এবং আঘাত করতে পারার যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-এর তথ্য অনুয়ায়ী সামরিক সক্ষমতায় ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম যা ইসরায়েলের (১৭তম) চেয়েও এগিয়ে। তাদের হিসেবে ইরানের ৫৫১টি সামরিক বিমান, ১২৯টি হেলিকপ্টার, ৬৫ হাজার ৭৬৫টি সাঁজোয়া যান, ১ হাজার ৯৯৬টি ট্যাংক, ১০১টি যুদ্ধজাহাজ ও ১৯টি ডুবোজাহাজ রয়েছে।

তবে ইরানের অস্ত্র নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সেখানেও পাওয়া যায় না। উদাহরণস্বরূপ সেখানে ইরানের নৌবাহিনীতে কোনো আকাশযান বা হেলিকপ্টার বহন করার সক্ষমতা নেই বলা হয়। যদিও ২০২১ সালে ইরানের সামরিক মহড়ার প্রকাশিত ছবিতে মাকরান নামে একটি হেলিকপ্টারবাহী জাহাজ দেখা যায়।

তবে প্রশ্ন আসে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরেও কীভাবে এই সক্ষমতা তৈরি করলো ইরান? ধারণা করা হয়, নিজস্ব অস্ত্র সমৃদ্ধ করতে ইরান বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে যন্ত্রাংশ চোরাচালান করে নিয়ে আসা হয়। এছাড়া রাশিয়া তো আছেই, চীন ও উত্তর কোরিয়ার ওপরেও কিছুটা নির্ভর করে তারা। এমনটা বলেছেন ড. হুশ্যাং হাসান ইয়ারি।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ২০২৪ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৩ সালেই ইরান ১০.৩ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ এক হাজার কোটি ডলারের বেশি অস্ত্রের পেছনে খরচ করেছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের হিসেবে বছরে ৯৯৫ কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দ করা হয় সামরিক খাতে।

তবে ড. ইয়ারির মতে, পশ্চিমাদের তুলনায় ইরানের অস্ত্র অতটা নিখুঁত না হওয়ায় তারা বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বাড়িয়েছে যেটা সাম্প্রতিক হামলাগুলো থেকেও লক্ষ্য করা যায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি করতে কাজ করার মতো ইরানের বেশ কিছু স্কলার রয়েছেন যারা ন্যানোটেকনোলজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর মতো গবেষণা ও কাজ করেন।

এত অর্থ আসে কীভাবে?
ইরানের আর্থিক সামর্থ্যের পেছনে সবচেয়ে বড় যে দিক কাজ করেছে সেটি মূলত এর প্রাকৃতিক সম্পদ। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালেও বিশ্বে গ্যাসের দ্বিতীয় ও তেলের তৃতীয় বৃহত্তম মজুদ ছিল ইরানের। তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদে যথেষ্ট সমৃদ্ধ ইরান।

এছাড়া ইরান লাগোয়া হরমুজ প্রণালী কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ৩৪ কিলোমিটার প্রশস্ত এ অংশ দিয়ে বিশ্বের ২১ শতাংশ তেলের সরবরাহ হয়। মজার বিষয় হলো ইরানের জ্বালানিকে কেন্দ্র করে নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও খোদ আমেরিকাও তাদের জ্বালানি কেনে। মাঝে ১০ বছর পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও গত চার বছরে কিছু তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য কিনেছে তারা। যেটা প্রকাশ করেছে আমেরিকাই।

জ্বালানি তো বটেই এর বাইরেও নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি করে ইরান। বিশ্বে বাণিজ্যে খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে ইরানের আপেল, গম, যব, কমলা, আখ, আলু, পোল্ট্রি বা সবজির মতো পণ্য রয়েছে। এছাড়া অস্ত্র, সিমেন্ট, রাসায়নিক পদার্থ, নির্মাণ সামগ্রী, সার, ধাতব পণ্য, টেক্সটাইলের মতো অনেক ধরনের পণ্য রয়েছে, এবং বড় যুদ্ধ বাঁধলে সেসব খাতে বিশ্ববাজারে একটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে তারা।

বাংলাদেশেও ইরানের আতর, রত্নপাথর বা জাফরানের মতো পণ্য কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া পারস্য সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস ইরানের পণ্যকে বিশ্বব্যাপী আলাদা একটা নামডাকের জায়গা দিয়েছে। ইরানের কার্পেট, কারুপণ্য ও হস্তশিল্পের জিনিস বেশ জনপ্রিয়।

আনঅফিসিয়াল বাণিজ্যের মাধ্যমে বার্টার, হুন্ডি, ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক বাজারও ধরে রেখেছে ইরান যেখানে বড় ক্রেতা হিসেবে আফগানিস্তান, সিরিয়া, তুরস্ক, চীন, রাশিয়ার মতো দেশ রয়েছে।

ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থানও রয়েছে যেটা এশিয়ার সাথে মধ্যপ্রাচ্য, পারস্য উপসাগর এবং ইউরোপের সংযোগ তৈরি করে। অনেক ইরানি বিশ্লেষক মনে করেন নিষেধাজ্ঞায় জনগণের ওপরে বড় ধাক্কা আসলেও সেসব নিষেধাজ্ঞাই ইরানকে স্বনির্ভর হতে, নিজেদের উন্নতিতে বিকল্প পথ তৈরি করতে সাহায্য করেছে।

এছাড়া ইরানের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে এবং বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে সমৃদ্ধ করতে নেতৃত্বের একটা বড় প্রভাবের কথাও আসে। এমন অনেক কিছুর সমন্বয়ে নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের একটি বড় আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করে গেছে ইরান। গড়ে তুলেছে বিস্তৃত এক প্রক্সি নেটওয়ার্ক। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে পশ্চিমা নানা নিষেধাজ্ঞা থেকে ইরানে বের হয়ে আসার মতো কোনো আলামত তো নেই বরং বড়সড় যুদ্ধে জড়ালে আরও কিছু নতুন বাস্তবতার মুখেই পড়তে যাচ্ছে তারা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

টিটিএন


নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

নিষেধাজ্ঞার পরেও যেভাবে সামরিক শক্তি অর্জন করেছে ইরান

আপডেট সময় : ০১:৪২:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪


মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ক্রমাগত ভয়াবহ অবনতির দিকে যাচ্ছে। সম্প্রতি ইসরায়েলে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। একে ইসরায়েলের অপরাধের ‘ন্যূনতম শাস্তি’ বলে উল্লেখ করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

এই হামলার কৌশলগত দিক বিশ্লেষণ করে আমেরিকার ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার বলছে, এত বেশি সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র এমনভাবে ছোড়া হয়েছে যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চাপে ফেলেছে। ইসরায়েলি বাহিনী সবার আগে ঘনবসতি এলাকায় হামলা ঠেকাতে চেয়েছে এবং তুলনামূলক কম ঘনবসতি এলাকা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

এজন্য বেশ কয়েকটি বিমানঘাঁটি যেগুলো তুলনামূলক কম ঘনবসতি এলাকায় সেগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি ইসরায়েল। তেল আবিবের কাছে গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দফতরের কাছেও আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র।

তেহরান এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জুলাই মাসে তেহরানে হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়েকে হত্যা এবং বৈরুতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাকে হত্যার জবাব দিতে এই হামলা চালিয়েছে তারা।

আগে থেকেই ইসরায়েল বা আমেরিকার জন্য একটা বড় মাথাব্যথার জায়গা ছিল ইরান। লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি অথবা সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্ত্রশস্ত্রের পেছনে ইরানের সম্পৃক্ততার কথা এসেছে বারবার।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনী বা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ ছিল অনেক আগে থেকেই। আয়রন ডোমসহ শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও ইরানের হামলা পুরোপুরি ঠেকাতে পারেনি ইসরায়েল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বহু ধরনের নিষেধাজ্ঞায় থাকা ইরান কীভাবে অস্ত্র পাচ্ছে বা তৈরি করছে তাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইরানের বর্তমান অস্ত্রের সক্ষমতার পেছনে যেসব বিষয় কাজ করেছে সেটা জানতে একটু পেছন থেকে শুরু করতে হবে।

ইরানের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের পুরোনো। তবে আধুনিক সেনাবাহিনী বা অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার শুরুটা হয়েছিল রেজা খান বা রেজা শাহ পাহলভির হাত ধরে। তিনি ১৯২০ এর দশকে সেনাকমান্ডার থেকে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ও রাজা হয়েছিলেন।

সামরিক বাহিনীর কমান্ডার হওয়ার পর তিনি আরতেশ বাহিনী গঠন করেন যেটাকে আধুনিক এক সশস্ত্র বাহিনীর সূচনা হিসেবে দেখা হয়। তিনি ইরানকে একটি আঞ্চলিক শক্তিতে রূপান্তর করতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি হাজারো অফিসারকে বিদেশে মিলিটারি একাডেমিতে পাঠিয়েছিলেন, পাশাপাশি নিজ দেশের বাহিনীকে বড় করতে থাকেন এবং তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পশ্চিমা অফিসারও নিয়োগ দেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ইরানের দখল নেয়। নাৎসি জার্মানির সঙ্গে সুসম্পর্কের জেরে রেজা শাহকে সরিয়ে রাজার আসনে আনা হয় তার পুত্র মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে, যিনি শাসনকালের প্রায় পুরোটা সময় পশ্চিমাপন্থি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

পশ্চিমাদের নজর ছিল ইরানের তেলের দিকে। তেলের টাকায় ৬০ থেকে ৭০ দশকজুড়ে মূলত আমেরিকা থেকে বহু আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কেনা হয়। মোহাম্মদ রেজা পাহলভি দেশকে আধুনিকায়ন করতে উদ্যোগ নিলেও জনবিচ্ছিন্নতা, একনায়কতন্ত্র এমন নানা প্রেক্ষাপটে বিপ্লবের সূচনা হয়। দাঙ্গা, ধর্মঘট আর বিক্ষোভের বাস্তবতায় দেশ ছেড়ে পালাতে হয় শাহ ও তার পরিবারকে। তবে তার অস্ত্র কেনা, সামরিক প্রশিক্ষণ, এমন নানা পদক্ষেপের কারণে ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের সময় ইরানের বাহিনী ছিল সে অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর একটি।

ইরানের সামরিক শক্তির ইতিহাস ও সক্ষমতার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে আমেরিকার ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির প্রতিবেদনে।

ইসলামি বিপ্লবের সাথে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির প্রত্যাবর্তন বা উত্থানেও সমস্যা ছিল না, সমস্যা বাঁধে কয়েক মাসের মাথায় যখন তার অনুগত একদল শিক্ষার্থী তেহরানে মার্কিন দূতাবাসের দখল নিয়ে ৫২ জন আমেরিকানকে জিম্মি করে। তাদের দাবি ছিল, দেশান্তরী শাহকে বিচারের জন্য তেহরানে আনা। ৪৪৪ দিন স্থায়ী হওয়া এই সংকটের জেরে ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্র।

ইরান সেসময় অনেকটা একঘরে এবং সামরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। সেটাকেই ‘প্রথম অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা’ বলা যায় যার জেরে তখন পর্যন্ত বাকি থাকা অস্ত্রের সরবরাহ আর পায়নি ইরান। শাহ পাহলভির রেখে যাওয়া সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ড কর্পস বা বিপ্লবী বাহিনী গড়ে তোলা হয় আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে।

১৯৮০ সালে ইরানে ইরাক হামলা চালায়। প্রাথমিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও ধীরে ধীরে পেশাদারিত্ব বাড়তে থাকে নব্য গঠিত বিপ্লবী গার্ডের। ১৯৮২ সালে সাদ্দাম হোসেনের বাহিনীকে হটিয়ে পাল্টা হামলা করে ইরান।

সামরিক ও ইরান বিষয়ক বিশ্লেষক এবং কানাডার রয়্যাল মিলিটারি কলেজের একজন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. হুশ্যাং হাসান ইয়ারি বলেন, প্রথমদিকে আগেরকার মার্কিন অস্ত্র দিয়ে মোকাবেলা করলেও যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকলে এক পর্যায়ে জোড়াতালি দেওয়া শুরু করতে হয়। যেমন একটি ফাইটার এফ-ফোরটিনের যন্ত্রাংশ আরেকটায় লাগিয়ে কাজ চালাতে হয়েছিল।

লিবিয়া থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি স্কাড মিসাইল ও যন্ত্রাংশ এনে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে কীভাবে বানানো হয়েছে, সেটা দেখে নিজেরা বানানোর চেষ্টা করেছিল ইরান। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যানও গোপনে কিছু অস্ত্র বিক্রি করে যা কন্ট্রা স্ক্যান্ডাল নামে পরিচিত। উত্তর কোরিয়া থেকেও ক্ষেপণাস্ত্র নেওয়া হয়। ধীরে ধীরে এগুলোর সাথে নানা গবেষণা চালিয়ে প্রয়োজন মেটাতে থাকে এবং তারা অবৈধভাবে বাইরে থেকে অস্ত্র আনার একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ঢুকে যায়।

১৯৮৮ সালে যথেষ্ট সমর্থন এবং রসদের অভাবে যুদ্ধবিরতিতে যেতে বাধ্য হলেও যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে ইরানের সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা নীতিতে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা, যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি, সব মিলিয়ে পরবর্তী দশকগুলোতে স্বনির্ভরতা ও যুদ্ধের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ হয় ইরান।

বিপ্লব এবং ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে বলে উল্লেখ করেন বিবিসি পার্সিয়ান সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক পারহাম ঘোবাদিও। বিশেষত ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইলের বিষয়ে বেশি জোর দেওয়া হয় এবং এজন্য উত্তর কোরিয়া, চীনা এবং রাশিয়ানদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে থাকে এবং নিজেরাই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে থাকে ইরান।

৯০-এর দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শিয়া গোষ্ঠী আর বিভিন্ন দিকে সম্ভাব্য মিত্রদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক শক্ত করতে থাকে ইরান। চার দশকের বেশি সময় ধরে বহু ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসে দেশটির ওপর। শুধুমাত্র জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইরান সংশ্লিষ্ট ছয় শতাধিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা।

বর্তমান সক্ষমতা এবং এর উৎস
ইসরায়েলের এবারের হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যেটি অনেক কম সময়ে আঘাত হানতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, এগুলো ঠেকানো কিছুটা কঠিন কারণ এর গতি।

এপ্রিল মাসে ইসরায়েলে ইরান যে হামলা করেছিল সে তুলনায় এটি একটি বড় পার্থক্যের জায়গা বলে উল্লেখ করেন ঘোবাদি। আগেকার হামলায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোনের মতো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।

যেখানে ড্রোন ইসরায়েলে পৌঁছাতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় নেয় সে তুলনায় এবারকার হামলায় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের দাবি করেছে ইরান যেটা ইসরায়েলে পৌঁছাতে গড়পড়তা দশ মিনিটের মতো সময় লাগে বলে উল্লেখ করেন পারহাম ঘোবাদি। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের মতো দূরত্ব এত কম সময়ে পাড়ি দেওয়ায় আগের তুলনায় বেশি আঘাত হানতে পেরেছে বলে মনে করেন তিনি।

শুধু ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে দেখলেও ইরানের স্বল্প ও দূরপাল্লার বিভিন্ন ধরনের মিসাইল রয়েছে। যেমন শাহাব-৩ দুই হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত পাড়ি দিতে সক্ষম অর্থাৎ ইসরায়েল পার করে মিশর, অন্যদিকে ইউরোপ, রাশিয়া, ভারত বা চীন পর্যন্তও যেতে পারে এসব ক্ষেপণাস্ত্র।

ইরানের অস্ত্র সরঞ্জামের বড় যোগানদাতা রাশিয়া হলেও ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকেই নিজেদের তৈরি ড্রোন দিয়েছে ইরান।

অনেকে বলেন, ইরান যদি একবার কিছু একটা দেখার সুযোগ পায় এবং মনে করে তাদের জন্য এটা ভালো হতে পারে তাহলে সেটা তারা বানিয়ে ফেলতে পারে। কয়েক বছর আগে আমেরিকার ড্রোন ভূপাতিত করার পর তারা ড্রোন বানাতে থাকে এবং এখন ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি তাদের প্রতিরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ড্রোন।

তবে ইরানের আধা-সরকারি সংবাদমাধ্যম আইএসএনএর এপ্রিল মাসের একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স আরও বেশ কিছু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের তথ্য উল্লেখ করেছে। যেমন হাজ কাসেম ১৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে, খেইবার ২০০০ কিলোমিটার এবং সেজিল ২৫০০ কিলোমিটার, যেটি ঘণ্টায় ১৭ হাজার কিলোমিটারের বেশি গতিতে ছুটতে সক্ষম।

মধ্যপ্রাচ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা ইরানের সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বহু ধরনের মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্রের বহর ছাড়াও অনেক ধরনের অস্ত্রসম্ভার রয়েছে ইরানের।

সেনাবাহিনীর রয়েছে অনেক ধরনের বন্দুক, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান, রকেট লঞ্চারের মতো অস্ত্র। নৌবাহিনীর রয়েছে অনেক ধরনের ছোট-বড় রণতরী, নেভাল মাইন বা বিস্ফোরক, ডুবোজাহাজ, হেলিকপ্টারবাহী তরী এবং টহল জাহাজ।

বিমান বাহিনীর আছে হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান ও বহু ধরনের ড্রোন। সাইবার শক্তিও যথেষ্ট উন্নত করেছে ইরান। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ করার দিক তো ছিলই, যেটা নিয়ে সম্প্রতি জো বাইডেনও জানিয়েছেন ইরানে কোনও পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা তিনি সমর্থন করেন না।

নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর বহরকে তুলনামূলক পুরোনো ধাঁচের বা কম সক্ষম হিসেবে দেখা হলেও মঙ্গলবারের হামলা থেকে বোঝা যাচ্ছে তাদের হামলা এবং আঘাত করতে পারার যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-এর তথ্য অনুয়ায়ী সামরিক সক্ষমতায় ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম যা ইসরায়েলের (১৭তম) চেয়েও এগিয়ে। তাদের হিসেবে ইরানের ৫৫১টি সামরিক বিমান, ১২৯টি হেলিকপ্টার, ৬৫ হাজার ৭৬৫টি সাঁজোয়া যান, ১ হাজার ৯৯৬টি ট্যাংক, ১০১টি যুদ্ধজাহাজ ও ১৯টি ডুবোজাহাজ রয়েছে।

তবে ইরানের অস্ত্র নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সেখানেও পাওয়া যায় না। উদাহরণস্বরূপ সেখানে ইরানের নৌবাহিনীতে কোনো আকাশযান বা হেলিকপ্টার বহন করার সক্ষমতা নেই বলা হয়। যদিও ২০২১ সালে ইরানের সামরিক মহড়ার প্রকাশিত ছবিতে মাকরান নামে একটি হেলিকপ্টারবাহী জাহাজ দেখা যায়।

তবে প্রশ্ন আসে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরেও কীভাবে এই সক্ষমতা তৈরি করলো ইরান? ধারণা করা হয়, নিজস্ব অস্ত্র সমৃদ্ধ করতে ইরান বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে যন্ত্রাংশ চোরাচালান করে নিয়ে আসা হয়। এছাড়া রাশিয়া তো আছেই, চীন ও উত্তর কোরিয়ার ওপরেও কিছুটা নির্ভর করে তারা। এমনটা বলেছেন ড. হুশ্যাং হাসান ইয়ারি।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ২০২৪ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৩ সালেই ইরান ১০.৩ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ এক হাজার কোটি ডলারের বেশি অস্ত্রের পেছনে খরচ করেছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের হিসেবে বছরে ৯৯৫ কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দ করা হয় সামরিক খাতে।

তবে ড. ইয়ারির মতে, পশ্চিমাদের তুলনায় ইরানের অস্ত্র অতটা নিখুঁত না হওয়ায় তারা বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বাড়িয়েছে যেটা সাম্প্রতিক হামলাগুলো থেকেও লক্ষ্য করা যায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি করতে কাজ করার মতো ইরানের বেশ কিছু স্কলার রয়েছেন যারা ন্যানোটেকনোলজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর মতো গবেষণা ও কাজ করেন।

এত অর্থ আসে কীভাবে?
ইরানের আর্থিক সামর্থ্যের পেছনে সবচেয়ে বড় যে দিক কাজ করেছে সেটি মূলত এর প্রাকৃতিক সম্পদ। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালেও বিশ্বে গ্যাসের দ্বিতীয় ও তেলের তৃতীয় বৃহত্তম মজুদ ছিল ইরানের। তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদে যথেষ্ট সমৃদ্ধ ইরান।

এছাড়া ইরান লাগোয়া হরমুজ প্রণালী কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ৩৪ কিলোমিটার প্রশস্ত এ অংশ দিয়ে বিশ্বের ২১ শতাংশ তেলের সরবরাহ হয়। মজার বিষয় হলো ইরানের জ্বালানিকে কেন্দ্র করে নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও খোদ আমেরিকাও তাদের জ্বালানি কেনে। মাঝে ১০ বছর পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও গত চার বছরে কিছু তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য কিনেছে তারা। যেটা প্রকাশ করেছে আমেরিকাই।

জ্বালানি তো বটেই এর বাইরেও নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি করে ইরান। বিশ্বে বাণিজ্যে খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে ইরানের আপেল, গম, যব, কমলা, আখ, আলু, পোল্ট্রি বা সবজির মতো পণ্য রয়েছে। এছাড়া অস্ত্র, সিমেন্ট, রাসায়নিক পদার্থ, নির্মাণ সামগ্রী, সার, ধাতব পণ্য, টেক্সটাইলের মতো অনেক ধরনের পণ্য রয়েছে, এবং বড় যুদ্ধ বাঁধলে সেসব খাতে বিশ্ববাজারে একটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে তারা।

বাংলাদেশেও ইরানের আতর, রত্নপাথর বা জাফরানের মতো পণ্য কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া পারস্য সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস ইরানের পণ্যকে বিশ্বব্যাপী আলাদা একটা নামডাকের জায়গা দিয়েছে। ইরানের কার্পেট, কারুপণ্য ও হস্তশিল্পের জিনিস বেশ জনপ্রিয়।

আনঅফিসিয়াল বাণিজ্যের মাধ্যমে বার্টার, হুন্ডি, ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক বাজারও ধরে রেখেছে ইরান যেখানে বড় ক্রেতা হিসেবে আফগানিস্তান, সিরিয়া, তুরস্ক, চীন, রাশিয়ার মতো দেশ রয়েছে।

ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থানও রয়েছে যেটা এশিয়ার সাথে মধ্যপ্রাচ্য, পারস্য উপসাগর এবং ইউরোপের সংযোগ তৈরি করে। অনেক ইরানি বিশ্লেষক মনে করেন নিষেধাজ্ঞায় জনগণের ওপরে বড় ধাক্কা আসলেও সেসব নিষেধাজ্ঞাই ইরানকে স্বনির্ভর হতে, নিজেদের উন্নতিতে বিকল্প পথ তৈরি করতে সাহায্য করেছে।

এছাড়া ইরানের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে এবং বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে সমৃদ্ধ করতে নেতৃত্বের একটা বড় প্রভাবের কথাও আসে। এমন অনেক কিছুর সমন্বয়ে নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের একটি বড় আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করে গেছে ইরান। গড়ে তুলেছে বিস্তৃত এক প্রক্সি নেটওয়ার্ক। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে পশ্চিমা নানা নিষেধাজ্ঞা থেকে ইরানে বের হয়ে আসার মতো কোনো আলামত তো নেই বরং বড়সড় যুদ্ধে জড়ালে আরও কিছু নতুন বাস্তবতার মুখেই পড়তে যাচ্ছে তারা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

টিটিএন