বাকেরগঞ্জে ঠিকাদারের গাফিলতিতে ৬ বছরে শুরু হয়নি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ

0
404

জিয়াউল হক,বাকেরগঞ্জ।। বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় নিয়ামতি ইউনিয়নের মধ্য মহেশপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ ৬ বছরেও শুরু করেনি বাকেরগঞ্জের হাজী এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার কবির শিকদার। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত প্রায় ৬ বছর আগে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ওই বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ভেঙ্গে চারতলা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়।

টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্নের দায়িত্ব পায় মেসার্স হাজী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার কবির শিকদার কাজ শুরু করার নামে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটির সিংহভাগ ভেঙ্গে ফেলেন। পাশাপাশি স্কুল প্রাঙ্গণে বড় বড় গর্ত করে মাটি উত্তোলন করে রেখেছেন। পুরাতন ভবনের জরাজীর্ণ কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শিক্ষকরা। আর শিক্ষার্থীদেরও থাকছে হচ্ছে ঝুঁকিতে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগসহ নানাভাবে যোগাযোগ করেও মেলেনি কোনো সুফল।

রবিবার ২৪ (সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ভেঙ্গে ফেলা পুরাতন ভবনের মালামাল ও গর্ত খুঁড়ে উত্তোলন করা মাটিতে বিদ্যালয়ের মাঠ ও হাঁটা-চলার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও ভেঙ্গে ফেলা পুরাতন ও নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মালামাল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ দুটি টিন সেট ভবনের কক্ষে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। স্কুলের মাঠে ও ভবনের কক্ষের সামনে পড়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী। ইটের খোয়াসহ লোহার রডের ভীম। লোহার রড গুলো ৬ বছর যাবত বিদ্যালয় এর মাঠে পড়ে থেকে বৃষ্টির পানিতে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের কাগজকে অভিযোগ করে বলেন, ৬ বছরেও নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। এ কারণে জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনে গাদাগাদি করে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। আমাদের ক্লাস রুম গুলো হচ্ছে টিনশেডের পুরাতন ভবনে। এখন বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি উপরে চালা থেকে আমাদের জামাকাপড়সহ বই খাতা ভিজে যায়। আমাদের বিদ্যালয়ের অধিকাংশ রুমের জানালা নেই, ফ্যান নেই, প্রচন্ড গরম, ঝড় বৃষ্টি হলে পানি পড়ে কিন্তু তারপরেও সেখানেই ক্লাস করতে হচ্ছে। এতে আমাদের পাশাপাশি স্যারদেরও অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাই দ্রæতই নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করার দাবি জানাচ্ছি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এফ এম মিজানুর রহমান বলেন, ঠিকাদার কবি সিকদার নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করবেন বলে ৬ বছর আগেই আমাদের বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের সিংহভাগ ভেঙ্গে ফেলেছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের থাকা টয়লেট সেটাও ভেঙে ফেলেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আমরা এখন চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছি। আর এই কারণে বিদ্যালয়ের প্রায় ৪ শত শিক্ষার্থীদের ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।

বিষয়টি লিখিতভাবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরিচালক মীর মোয়াজ্জেম হোসেনকে অবহিত করা হলেও এখনো কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ভবন নির্মাণের জন্য ঠিকেদারকে পুনরায় ২০২৫ সাল পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তবে ঠিকাদার এখনো বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু না করায় এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান বাদশা বলেন, ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট স্থানীয় সংসদ সদস্য বেগম নাসরিন জাহান রতনা নতুন ভবন নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ।

ঠিকাদার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেও কোন সুফল মেলেনি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার দাস বলেন, নতুন ভবন নির্মানের প্রকল্পটি আমাদের দপ্তর সংশ্লিষ্ট নয়। তারপরেও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। হাজী এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারি ঠিকাদার কবির শিকদারকে ফোন করা হলে বিষয় তিনি বলেন, আপনারা এর আগো বাকেরগঞ্জ মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের অনিয়ম নিয়েও সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এখন আবার বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ ৬ বছরেও কেন শুরু হয়নি সেটা নিয়েও লিখতে থাকেন। তিনি ক্ষিপ্ত হযয়ে বলেন যত পারেন নিউজ করতে থাকেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here