বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি।।
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১৪ টি ইউনিয়নে দালাল দিয়ে রোগী ধরে এনে ডিএমএফ পাস ব্যক্তি ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারনার অভিযোগ উঠেছে গরীব মেডিকেল সেন্টার নামে এক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
গত তিন মাস ধরে বাকেরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের আব্দুল আজিজ ডাকুয়া সড়কে, রুনসী শরীফ বাড়ি ভবন ভাড়া নিয়ে গ্রামে গ্রামে দালাল নিয়োগ দিয়ে আধুনিক রোগ নিরাময়ের নামে গরীব মেডিকেল সেন্টার চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে ১০০ টাকা করে রোগী দেখার ফি নিয়ে কোন ধরনের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৈধ অনুমোদন ছাড়া ও ডাক্তার ছাড়াই দেদারছে চিকিৎসা সেবার নামে সাধারন মানুষের সাথে প্রতারনা করে ব্যবসা করে যাচ্ছে গরীব মেডিকেল সেন্টার নামে এক প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, বরিশাল সদর উপজেলার জগদ্দল গ্রামের আ: করিম খান এর পুত্র মো: হুমায়ুন কবির নামের এক ব্যক্তির গরীব মেডিকেল সেন্টার নামে কথিত ডাক্তার দিয়ে ইউনানী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার নামে প্রতারণা করে আসছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় চিকিৎসার নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন চুপচাপ রয়েছে।
পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের গৃহিণী সকুলি বেগম অভিযোগ করে বলেন, গরীব মেডিকেল সেন্টার থেকে এক মহিলা এসে কয়েকদিন আগে ১০০ টাকার বিনিময়ে ভালো ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে একটি কার্ড প্রদান করেন। পরে আমি ডাক্তার দেখাতে গেলে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই আমাকে ২ হাজার টাকার ইউনানী আয়ুর্বেদিক ঔষধ দেয়। কিছুদিন ঔষধ খেলে অসুস্থতা আরও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে বরিশাল গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে আমাকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তিন মাস পূর্বে বাকেরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের আব্দুল আজিজ ডাকুয়া সড়কে, রুনসী শরীফ বাড়ি ভবন ভাড়া নিয়ে গরীব মেডিকেল সেন্টার নামে এক প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ড লাগিয়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী আনতে কমিশন ভিত্তিক মহিলা ও যুবতী নারীদের দালাল নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। নিয়োগপ্রাপ্ত দালালরা এলাকায় এলাকায় ঘুরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে ১০০ টাকার বিনিময়ে ডাক্তার দিয়ে রোগী দেখিয়ে ও কম্পিউটারের সাহায্যে রোগ নির্ণয় করে ইউনানী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে প্রচার চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে রোগী নিয়ে আসে। এখন শুধু বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডেই নয় পাদ্রীশিবপুর নিউমার্কেট, মহেশপুর বাজার, নিয়ামতি ইউনিয়ন সহ উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গরীব মেডিকেল সেন্টার গড়ে তুলেছে এই প্রতারক চক্র। এখন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে এসে প্রতারণা শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি ভুয়া চিকিৎসকের মাধ্যমে ভেজাল ঔষধ খেয়ে বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই।
৯ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে সংবাদ মাধ্যম গরীব মেডিকেল সেন্টার নামের প্রতিষ্ঠানটিতে গেলে দেখতে পায়, ভাড়া বাসার সামনের রুমে একটি ফার্মেসিতে গরীব মেডিকেল সেন্টার লেখা চিকিৎসা কেন্দ্রের একটি বড় সাইনবোর্ড। মেডিকেল সেন্টারের প্রবেশ মুখেই রিসিপশনে এক নারী বসা। পাশের রুমেই আরেক নারী রোগীদের সিরিয়াল নম্বর দিচ্ছেন।
ভিতরে ডুকে দেখা যায় দুই রুমে চেয়ারে বসা বেশ কয়েকজন রোগী। ভিতরের রুমে চেম্বারে বসা রয়েছেন কথিত ডাক্তার। ডাক্তার পরিচয়ে রোগীদের একটি প্রেসার মাপার মেশিনের সাহায্যে সব রোগ যাচাই করে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকার ইউনানী আয়ুর্বেদিক নামের বিভিন্ন কোম্পানির ঔষধ। ডাক্তারের পরিচয় জানতে চাইলে সে জানায় সে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিএফএফ পাস করেছে সে এমবিবিএস ডাক্তার না। প্রতিষ্ঠানটির কি অনুমোদন রয়েছে জানতে চাইলে সে জানায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক হুমায়ুন কবির এই বিষয়টি বলতে পারবেন। আমি সপ্তাহে তিন দিন এখানে রোগী দেখি। আমাকে প্রতিদিন আসা যাওয়ার ভাড়া খরচ সহ ১০০০ টাকা করে দেয়।
এই মেডিকেল সেন্টারে যে সব রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয় তার মধ্যে রয়েছে, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, এ্যাজমা, চর্ম রোগ, উচ্চ রক্ত চাপ, বাত ব্যাথা, গ্যাস্টিক আলসার, স্মৃতি শক্তির দুর্বলতা, হাই কোলেস্টরল, পেটের ব্যাথা, কাশি জনিত শ্বাস কষ্ট, অতিরিক্ত ওজন, নাকের মাংস বৃদ্ধি এবং গর্ভকালিন মা ও শিশু ইত্যাদি চিকিৎসা দেওয়া হয়।
গরীব মেডিকেল সেন্টারে কথা হয় গারুড়িয়া ইউনিয়নের রাহিমা নামের এক যুবতীর সাথে তিনি জানায়, আমি এখানে কোন বেতনভুক্ত কর্মচারী নয়। গ্রাম থেকে এখানে রোগী এনে দিলে প্রত্যেক রোগী থেকে ১০০ টাকা নেয়া হলে আমি তা থেকে ৪০ টাকা পাই। এবং রোগীদের ব্যবস্থাপত্র ও ঔষধ দিলে সেই টাকা থেকে আমাকে ২০ শতাংশ দেয়া হয়। এতে আমার মাসে আট দশ হাজার টাকা আসে।
গরীব মেডিকেল সেন্টার নামের প্রতিষ্ঠানটির মালিক হুমায়ুন কবির জানান, বাকেরগঞ্জ পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স করে এখানে মেডিকেল সেন্টার করেছি।
বরিশাল সিভিল সার্জন ডাঃ মারিয়া হাসান বলেন, বাকেরগঞ্জ গরীব মেডিকেল সেন্টার চিকিৎসা সেবা দেয়া কোন প্রতিষ্ঠান রয়েছে তা আপনাদের সংবাদ মাধ্যমের থেকেই শুনলাম। যদি কোন প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারণা করেন তাহলে খোঁজখবর নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে খুব শীঘ্রই ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল জানান, গরীব মেডিকেল সেন্টার নামে বাকেরগঞ্জ কোন বৈধ চিকিৎসা সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান নেই। যদি কোন প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা সেবা দেয়া নামে প্রতারণা করে থাকেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।