বাকেরগঞ্জ বরিশাল। বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের মৃত হাসেম সিকদারের পুত্র নিজাম সিকদার বৃদ্ধ দম্পতি (৮৫) ও নিলুফা বেগম (৭০) জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বৃহস্পতিবার ৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১ টার সময় রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে দেখা হয় ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ভিক্ষুক নিজাম শিকদারের সাথে।
গ্রামীন মাটির রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত কাদামাটির মধ্যে কাঁধে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি দু’মুঠো চালের জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। জীবনের শেষ প্রান্তে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন ভিক্ষুক নিজাম। সকালের বার্তা সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা হলে থর থর করে দেহ কাঁপতে থাকা নিজাম করুন সুরে বলেন বাবা মোড় কেউ নেই! ঘর দুয়ার হারিয়েছি অনেক আগেই।
বাকেরগঞ্জ সাহেবগঞ্জ ৫ নং ওয়ার্ডে একটি ভাড়া বাসায় মোড় অসুস্থ স্ত্রী নিয়া ঐহানে থাকি। তিন মেয়ে ছিল তাদের বিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই। মেয়েদের অভাবের সংসার তারা খোঁজখবর নিতে পারে না। তাই এখন কি করমু যেদিন ভিক্ষা করতে বের না হব সেই দিন মোগো না খাইয়া থাকতে হয়। তাই এহন জীবন বাঁচানোর লইগ্যা সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে মধ্যে ঘুরতাছি মানুষের দুয়ারে দুয়ারে।
সন্ধ্যার পর হলে হাটবাজারে দোকানে দোকানে পাঁচ-দশ টাকার জন্য মানুষের কাছে হাত পাতি। মাস গেলেই ১৫০০ টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয়। স্ত্রী নিলুফা অসুস্থ তার ঔষধের টাকাও ভিক্ষা করেই যোগাড় করতে হয়। এখন শ্বাসকাসের রোগে আক্রান্ত হয়েছি। বাবা জীবনডা আর চলে না। গরিবের কষ্ট কেউ দেহে না। ভিক্ষুক নিজাম অভিযোগ করে বলেন, সুখ কি জিনিস জীবনে চোখে দেখলাম না। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। ভিক্ষার টাকায় মাঝেমধ্যে সামান্য চিকিৎসা করালেও ভালো হয়নি। এভাবেই ভিক্ষে করতে করতে কখন জানি শ্বাসটা মোড় বন্ধ হয়ে যায়।
নিজাম একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমরা এত অসহায় তবু কেউ আমাদের সহযোগিতা করে না। বয়স্ক ভাতার কার্ড করলাম এক বছর হলো তাও টাকা পয়সা কিছুই পাইনি। সরকার গরিবের জন্য ঘর দেয়, শুনছি সরকার নাকি কার্ডের চাউল দেয় কোন মেম্বার চেয়ারম্যান একটা চাউলের কার্ড মোড়ে দেলে না। আল্লাহ্ মোড়ে কোনোমতে বাঁচায়ে রাখছে। খুব কষ্ট হয় কাদা মাটিতে সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে ঘুরতে। একদিন বইসা থাকতে পারি না।
তাইলে ঘরে আর খাবার জুটবে না। রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন সিকদার মোবাইল ফোনে বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে। আগে আমার কাছে আসছে কিনা আমার মনে নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজল চন্দ্র শীল বলেন, আপনাদের মাধ্যমেই আমি এরকম একটি সংবাদ পেয়েছি। অবশ্যই এই ভিক্ষুক পরিবারটির খোঁজখবর নিয়ে তাদের সহায়তা করা হবে। আর বয়স্ক ভাতা কার্ড তার আছে কি না সেটা দেখতে হবে। কার্ড করা হলে ভাতার টাকা কেনো পাইনি সেটাও দেখবো।