নিজস্ব সংবাদদাতা,বাকেরগঞ্জ,বরিশাল।।
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে খাবারের উচ্ছিষ্ট, মেডিক্যালের বর্জ্য, রক্তমাখা গজ-তুলাসহ পরিত্যক্ত জিনিসপত্র। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করায় রীতিমতো ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী স্থানগুলো। রোগী ও পথচারীদের দুর্গন্ধে নাকাল হয়ে উঠলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌর কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির ইমারজেন্সি বিভাগের প্রবেশ মুখে টয়লেট ও হাসপাতালের বর্জ্যের পানি ১২ মাস জমে থাকে। জমে থাকা পানির দুর্গন্ধ ও মশা মাছি ডায়রিয়া ওয়ার্ডের রুগি ও তাদের সাথে আসা লোকজনের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়াও হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন রুগীর জন্য খাপার রান্নায় দেখে গেছে ব্যাপক অনিয়ম। কাঠের পরিবর্তে হাসপাতালের বর্জ্য চুলায় দিয়ে খাবার পাক করা হচ্ছে। পাক করা খাবার ঢেকে না রাখায় মশা মাছি খাবারের উপর বসে রয়েছে। মানুষ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসে বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে আগত রোগীর স্বজনদের পাশাপাশি অন্যরা হাসপাতালের দুই ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে সারাদিনই পরিত্যক্ত জিনিসপত্র ফেলে যাচ্ছেন। হাসপাতাল ভবনের উত্তর পাশে চলাচলের পথেও অনবরত ময়লা ফেলা হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে এসে প্রবেশপথেই নাকে টিপে ধরতে হচ্ছে সাধারণ মানুষজনকে। তীব্র দুর্গন্ধে বমি হওয়ার উপক্রম। উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সেবা নিতে আসা ব্যাক্তিদের মধ্যে।
এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার উদাসীনতায় হাসপাতালে অনিম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮ জন ডাক্তার থাকলেও রোগিদের সেবা দিচ্ছেন মাত্র হাতে গোনা দুই একজন ডাক্তার।
বেলা ১২.৩০ মিনিটের পরে দুই একজন ডাক্তার ছাড়া সকলে চলে গেছেন। সাড়ে বারোটায় মেডিকেলে প্রবেশ করে কথা হয় টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা দেবশ্রী তিনি জানান, টিকিট কাউন্টার ১ টায় বন্ধ করা হয়। তিনি আরো জানান, রোগী না থাকলে ডাক্তার অনেক সময় ১ টার আগেই চলে যায়। তখন রোগী আসলে ইমারজেন্সি ডাক্তার থাকেন তিনি দেখেন।
এছাড়াও দুপুর ১২.৩০ মিনিটে দেখা যায়, ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী রোগীকে ঔষধ দেয়ার জন্য ফার্মাসিস্টের যে কক্ষটিতে রয়েছে সেটি শূন্য রয়েছে। অথচ মেডিকেলের ভিতর ফার্মেসীর সামনে রোগী ও রোগীর স্বজনরা ভিড় জমিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে রয়েছেন ঔষধ নেয়ার জন্য।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা দেবশ্রী তিনি এসে রুগীদের ঔষধ দিতে শুরু করেন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ফার্মাসিস্ট মোস্তাফিজ ছুটিতে রয়েছেন। তার পরিবর্তে একজন নার্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তিনি রোগীদের ঔষধ দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভুল ঔষধ নেয়ার শিকার হচ্ছে রুগীরা। যাহা একজন রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত বয়ে আনতে পারে।
এই বিষয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও ডাক্তার মো: আরিফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, ২টা ৩০ পর্যন্ত সকল ডাক্তার থাকার কথা। তবে কেউ যদি আগে চলে যায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবত এক্স-রে, আলতা স্নো মেশিন এমারজেন্সি রুমের জেনারেটর আইপিএস নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অপারেশন থিয়েটারের বেড ভাঙ্গাচুরা মরিচা পড়ে রয়েছে।
বেড একদিকে হেলে পড়েছে এক পাশের হাতল সিলিং ফ্যানের পাখা দিয়ে ঝালাই করে মেরামত করা হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারের বেডের উপর নেই লাইট। অথচ বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জন্য একটা ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের বরাদ্দ হয়েছে। সেটাও এক্স-রে মেশিন রাখার উপযুক্ত রুম না থাকায় হাসপাতালে আনার সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডক্টর শংকর কুমার প্রসাদ অধিকারী বলেন, এমনিতেই আমাদের জনবল সংকট এত বড় হাসপাতলে শুধু দুই জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি তারাও প্রতিশ্রুতি দিলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েছি এবং তারা পৌর সভাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করতে বলেছেন কিন্তু এখন পযর্ন্ত কোন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাবস্থা করেনি তারা।