এস এম পলাস, বাকেরগঞ্জ বরিশাল।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় আশ্রয়ন প্রকল্পের ২ আওতায় সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহীন পরিবারদের মাঝে গৃহ নির্মাণ করে পুনবাসন করা হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল, দেশে কোন মানুষ নাখেয়ে থাকবে না, কেউ গৃহহীন থাকবেনা সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী ঘর প্রদান করছেন।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বিশেষ উপহারের পাকা বাড়ি পেয়ে বদলে গেছে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর জীবনমান। প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে ২৬৬টি ও চতুর্থ ধাপে ২৭৭টি মোট – ৫৪৩ টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় বাড়ি দেওয়া হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে পাকা বাড়ির সঙ্গে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানি পাওয়ায় এবং ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারায় অনেক খুশি এসব অসহায় মানুষ। শুধু পাকা বাড়ি নয়, উপকারভোগীদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে আসছে উপজেলা প্রশাসন।
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পাল্টে দিয়েছে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জীবন যাত্রার গল্প। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর অনেকেরই জীবন পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। গৃহহীনদের জীবনের বেশী ভাগ সময় কেটেছে ভাসমান অবস্থায়, অনেকে গৃহহীন হয়ে গ্রাম ছেড়ে যুগের পর যুগ ঢাকাতে ভাড়া বাসায় আবার কেউ ঠাই করে নিয়েছিল বস্তিতে। তাদের ছিলনা কোন স্থায়ী ঠিকানা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরসহ জমির মালিকানা পেয়ে খুঁজে পেয়েছেন তাদের আসল ঠিকানা। তাদের কাছে দুঃস্বপ্ন ছিল নিজের জমির মালিকানা ও পাকা ঘরে তাদের হবে মাথা ঘুরার ঠাই। আজ আর স্বপ্ন নয় তারা খুঁজে পেয়েছেন নতুন এক ঠিকানা। বর্তমানে তারা নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন ভূমিহীন, গৃহহীন ও নিন্ম আয়ের মানুষগুলো প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা। অসহায় ছিন্নমূল উপকার ভোগী পরিবার পরিজনরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করেন।
উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের খেজুর ভরপাশা আশ্রয়ন প্রকল্পে গেলে দেখা যায় ৫০ বছর বয়সী নিছিমা বেগম আশ্রয়নের ঘরের সামনে মাটির চুলায় দুপুরের রান্না করছেন। তিনি জানান, আমার স্বামী আ: রাজ্জাক হাওলাদার ভরপাশা ইউনিয়নের কৃষ্ণকাঠি গ্রাম ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আমাদের কোনো জমি ও ঘর ছিল না। দুই যুগ আগে সংসার নিয়ে ঢাকায় চলে যাই। আমি গার্মেন্টসে চাকুরি করেছি। আমার স্বামী দারোয়ানি চাকুরি করেন এখনো। আমাদের তিন মেয়ে ছিল ওদের বিয়ে দিয়েছি।
জীবনের শেষ প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী ঘর প্রদান করছেন। ঘরের সাথে জমি দিয়েছেন। এখন আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের সামনে জতটুকু খালি জমি ছিলো আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেছি। পেপে গাছে ফল ধরেছে, সবজি লাগিয়েছি। আঙ্গিনার চাঁর পাশে ফলের গাছ লাগিয়েছি। শাক সবজির জন্য বাজারে যেতে হয়না। হাঁস মুরগি রয়েছে ডিম কিনতে হয় না। উপহারের ঘরে এখন সব রয়েছে। নতুন জীবন নতুন সংসার আমাদের। আবেগে চোখের পানি ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করেন তিনি।
রংশ্রী ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকল্পে গেলে কথা হয় রুবি দাস নামের এক নারীর সাথে তিনি জানান, ঘর না থাকায় পরিবারের ৮ জন নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকেছি ২০ বছর। এখন আমরা ঘর পেয়েছি তাই ভাড়া টাকা দিতে হয় না। ওই ভাড়ার টাকা দিয়েই আমরা মাছ মাংশ কিনে খাইতে পারি। কোনদিনও আমরা ভাবিনি এইরকম পাকা ঘর পাব আজ মা শেখ হাসিনার দয়ায় মাথা গোজার ঠাই হয়েছে আমাদের।
উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় উপহারের ঘর পাওয়া সবারই স্বপ্ন ও জীবন-যাপনে পরিবর্তন এসেছে। হঠাৎ এমন পরিবর্তনে একদিকে যেমন উচ্ছাসিত তারা। অপর দিকে নতুন করে বাঁচার তাগিদ তাদের মনে। শুধু নিজের ঘর নয়, পুরো প্রকল্প এলাকাটা তাদের যত্নে আবেগে সেজেছে সবুজ সমারোহে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের কোন মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবেনা। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের-২ এর আওতায় সারাদেশের মতো বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ইতোমধ্যে ৫৪৩টি উপহারের ঘর উপকারভোগীদের ইতিমধ্যেই হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন,চতুর্থ ধাপের ঘরগুলি নির্মাণাধীন কাজ চলছে।
সবচেয়ে ভালো মানের ইট, বালু, সিমেন্ট ও লোহার মালামাল দিয়ে দুই শতাংশ জায়গাসহ সেমিপাকা একটি ঘর করে দেয়া হয়েছে। সঙ্গে আছে রান্নাঘর, টয়লেট, আর্সেনিক মুক্ত পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ আঙিনায় হাঁস মুরগি পালন ও শাক সবজি চাষের ও সুব্যবস্থা রয়েছে। এর ফলে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত পরিবারগুলোর জীবন যাত্রার মানউন্নয়ন হচ্ছে বলে আমি মনে করি।