ঢাকা ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি/নোটিশ ::
সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||
সদ্য প্রাপ্ত খবর ::
মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি Munshiganj DC Place of work Activity Round 2025 bdnewspost.com বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বিসিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি BSCIC Process Round 2025 bdnewspost.com নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি Narayanganj DC Place of job Task Round 2025 bdnewspost.com এইচএসসি ইংরেজি ২য় পত্র প্রশ্ন সমাধান ২০২৪ (সকল বোর্ড) bdnewspost.com ভর্তি চলছেঃ BUBT-এর অর্থনীতি প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনার ভবিষ্যৎ উন্মোচন করুন! bdnewspost.com আলিম বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান ২০২৪ PDF bdnewspost.com Alim Bangla 2d Paper Query answer 2025 – Alim Bangla 2d Paper Query Solution 2025 PDF Obtain bdnewspost.com আলিম বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান ২০২৫ PDF bdnewspost.com HSC English 2d Paper Query Solution 2025 – HSC English 2d Paper Query resolution 2025 PDF All Board bdnewspost.com এইচএসসি ইংরেজি ২য় পত্র প্রশ্ন সমাধান ২০২৫ (সকল বোর্ড) bdnewspost.com

শিক্ষা-শিল্প-বিচারে নয়া থাবা বাবা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৫৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪ ৯৬ বার পড়া হয়েছে


সেই মফস্বলেও বিভিন্ন জায়গায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় গিয়ে উৎপাত। নাজেহালসহ প্রতিষ্ঠান প্রধানকে পদত্যাগে বাধ্য করা। আদালতে তোলার সময় আসামীকে আঘাত করা। শিল্প প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, আগুন, লুটপাট। এসবের একটাও কি বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের এজেন্ডাভুক্ত? মোটেই না। কাজগুলো কিন্তু যাচ্ছে তাদের আমলনামাতেই। আটক ব্যক্তিকে আদালতের ভেতরে-বাইরে বা আঙ্গিনায় শারীরিক আঘাত করে বীরত্ব দেখানো কাপুরুষতা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এর নিন্দা করেছেন। বলেছেন, বিচারের আগে বিচার বন্ধ করতে হবে।

চলতি পথে কোথাও কোথাও দেখা হয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের সাথে। তারা এসবে খুব কষ্ট পাচ্ছেন। তারা এতো খারাপ ছিলেন না বলে দাবিও করেন। কতো খারাপ ছিলেন? এ প্রশ্নে মাইন্ড করেন। ক্ষমতায় থাকতে আপনাদের দুয়েকটি ভুলের কথা কি মনে পড়ে? এ প্রশ্নেও চটে যান। একবাক্যে বলেন, না তাদের কোনো ভুল নেই। মানতেই রাজি নন যে, টানা দেড় দশক অসংখ্য ভুলকে সঠিক মনে করা আরেকটি মস্ত ভুল। আবার বর্তমানে বীরত্বের সাথে মাঠ দাবড়ানোরাও মানতে রাজি নন, ক্ষোভ, ঘৃনা কিংবা প্রতিহিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাও একটা সংস্কার। এ কথা ভীষণ নাপছন্দ তাদের।

নিদারুণ এই বাস্তবতার মধ্যেই আমাদের টিকে থাকা, এগিয়ে চলা। আদালত প্রাঙ্গণে এবং আদালতে সংঘটিত সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় বিবেকমান মানুষ উদ্বিগ্ন। যে কোনও অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তি যেমন অধিকার তেমনি তার নিরাপত্তা বিধান সরকারের দায়িত্ব। আটক ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করার সময় এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার যাতে করে এই ধারণা তৈরি না হয় যে, তিনি ন্যায়বিচার বঞ্চিত হতে পারেন। তারওপর অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ চাওয়া মাত্রই অভিযুক্তদের রিমান্ডে দেবার ব্যবস্থাও বিচার বিভাগের জন্যে খুব ভালো কাজ নয়। এ ধরনের কথা বর্তমানদের মানতে কষ্ট। বরং একে সমবিচার, ট্রিট ফর টেট বলতে পছন্দ তাদের। আদালত হওয়ার কথা পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। কারণ আদালত হচ্ছে আইনের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পীঠস্থান। একইসাথে একজন আসামী পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তি। তার পাশে আইন ছাড়া তখন আর কিছু নেই, কেউ নেই।সেই আদালতে একজন আসামীর উপরে কিভাবে হামলা হয়? ক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের হাত থেকে আসামীকে রক্ষা করা আদালতের দায়িত্ব। আইনজীবীরা আদালতের অংশ। তাদের ছাড়া বিচারকাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব। সেই আইনজীবীরাও নানা গালমন্দসহ আসামীকে আক্রমণ করেন।

যতোটুকু গেলা যায়, ততোটুকুই মুখে নেয়ার কথাকে তারা তাত্বিক মনে করেন। প্রাকৃতিক ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক ঐতিহাসিক কারণেই বাংলাদেশ যেন একটি যুদ্ধের ময়দান। এ ধরনের পারস্পরিক শত্রুতার ফাঁকেফুকেই বুঝি আমাদের কোনো মতে টিকে থাকা! আর উপায়হীন হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলা। আল্লাহ ভালো রেখেছেন বলে একটা টাটকা মিথ্যা বলা। এই ফাঁকে যে বিপ্লবের ইমেজে কালি লাগতে শুরু করেছে, তাও মেনে নেয়ার নিয়তি ভর করেছে। এ অবস্থার মাঝেই গত রবিবার রাত নয়টায় রূপগঞ্জের খাদুন এলাকায় সাবেক মন্ত্রী-এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর একটি কারখানায় আগুন-লুটপাট। দেশের অর্থনীতিতে আঘাত- দ্বিতীয় স্বাদহীনতার উপহার।নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে গাজী গ্রুপের টায়ার তৈরির কারখানায় আগুন লাগার পর থেকে অন্তত ১৭৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের স্বজনরা দাবি করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি তালিকা তৈরি করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। কিন্তু, এর সত্যতা নিয়েও নানা রাজনীতি ও অপকথা। আবার স্যাবোটাজের কথাও বলা হচ্ছে। কারখানাটি গোলাম দস্তগীর গাজীর তা যেমন সত্য, এটি দেশের অর্থনীতির একটি উপাদানও। সংকটে থাকা অর্থনীতিতে তা আরেকটা ধাক্কা। দেশে সরকার, মাঠে সেনাবাহিনী থাকার পরও তা কিভাবে হলো। আগামী প্রজন্ম যদি এটা জানতে চায়,কী বলবেন? তর্কে না গিয়ে ধরা যাক, গাজী বড় বাজে লোক। শেখ হাসিনার সহযোগী ছিল। তার বহু কাজ শাস্তিযোগ্য হতে পারে। বাংলাদেশে গাড়ির টায়ায় শিল্প যেখানে বিদেশ নির্ভর,সেখানে এই কারখানাটা দেশেই গড়ে তোলার কারনে কতো টাকা সাশ্রয় হতো! এখানে চার হাজার কর্মী ছিল। মানে চার হাজার পরিবার তাদের বাঁচার অবলম্বন হারিয়ে ফেললো!

এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘাড় ধরে ধরে সারা দেশে পদত্যাগ করানোর বিপ্লব দেখে যেতে হচ্ছে বিনা টিকিটের দর্শকের মতো। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ম বিধি অনুযায়ী পদায়ন ও বদল করা হয়। তাদের বলপূর্বক পদত্যাগের সুযোগ নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের কারও বিরুদ্ধে ন্যায়সংগত অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থাও নেয়া যায়। শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ সংস্কৃতিতে বিরক্ত। সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন, জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে প্রশাসন ভেঙে পড়তে পারে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পেতে অসুবিধা হবে। শিক্ষাঙ্গনে বল প্রয়োগ এবং কাউকে ব্যক্তিগতভাবে অপমান না করতে বলেছেন তিনি। যে যত অন্যায় করুক, নিয়মমাফিক যত দ্রুত পারা যায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা। আমরা অর্থলোভী-ব্যাক্তিত্বহীন, দলচাটা শিক্ষকের কথা শুনি। এরা সরকারি দলের পাতিনেতাদের সামনেও লেজ নাড়ে। সামান্যতম সুবিধা পাওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের সামনেই দুর্নীতিবাজদের তোষামোদ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শেষ করে দিয়েছে এমন হাজার হাজার শিক্ষক। তা নিচের দিকেও সংক্রমিত। হাইস্কুলের হেড মাস্টার আর কলেজের কিছু প্রিন্সিপাল ভর্তির সময় বেশি টাকা নেয়, পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপের সময় বেশি টাকা নেন। এমনকি টেস্টিমোনিয়াল ইস্যু করার সময়ও টাকা নেন। এসব শিক্ষককে ছাত্রছাত্রীরা সম্মান করে না। তবে সরকারি প্রাইমারি শিক্ষকদের দেখেছি শুধু অত্যাচারিত হতেই। নারায়ণগঞ্জের ওসমানিয়া সাম্রাজ্যে যে শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বোস করানো হয়েছিল, সেই ধারাবাহিকতাই বুঝি এখন কালের নিয়ম।

মনে রাখতেই হবে, কোনও রাজনৈতিক দলের গণ-অভ্যূত্থানে এই সরকার গঠন হয়নি। এই সরকার দেশের আপামর ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থান ও অশ্রুতপূর্ব রক্তদানের ফসল। ম্যান্ডেট ছাত্র-জনতার। ম্যান্ডেট রাষ্ট্র সংস্কারের। ছাত্র-জনতাকেই ঠিক করতে দিন সরকারের কর্মকৌশল, রোডম্যাপ এবং মেয়াদ। রাজনীতি মানেই ক্ষমতাসীন দলের নীতি করে ফেলার পরিণতিতে আজ না হোক কাল শেখ হাসিনার সরকারের পতন অনিবার্য ছিল। ১৫ বছর ৭ মাসের অন্যায়, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় তথা জনগণের সম্পদ লুটপাট, অবিরাম মিথ্যাচার, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার পরেও একটা জগদ্দল পাথরের মতো সরকার টিকে থাকতে পারে না। ৫ আগস্ট না হলেও একসময় তার পতন ঘটতোই। ছাত্র-জনতা শুধু শাসক দলের পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেনি। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যও আন্দোলন করেনি।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

এইচআর/এএসএম


নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

শিক্ষা-শিল্প-বিচারে নয়া থাবা বাবা

আপডেট সময় : ০৯:৫৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪


সেই মফস্বলেও বিভিন্ন জায়গায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় গিয়ে উৎপাত। নাজেহালসহ প্রতিষ্ঠান প্রধানকে পদত্যাগে বাধ্য করা। আদালতে তোলার সময় আসামীকে আঘাত করা। শিল্প প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, আগুন, লুটপাট। এসবের একটাও কি বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের এজেন্ডাভুক্ত? মোটেই না। কাজগুলো কিন্তু যাচ্ছে তাদের আমলনামাতেই। আটক ব্যক্তিকে আদালতের ভেতরে-বাইরে বা আঙ্গিনায় শারীরিক আঘাত করে বীরত্ব দেখানো কাপুরুষতা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এর নিন্দা করেছেন। বলেছেন, বিচারের আগে বিচার বন্ধ করতে হবে।

চলতি পথে কোথাও কোথাও দেখা হয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের সাথে। তারা এসবে খুব কষ্ট পাচ্ছেন। তারা এতো খারাপ ছিলেন না বলে দাবিও করেন। কতো খারাপ ছিলেন? এ প্রশ্নে মাইন্ড করেন। ক্ষমতায় থাকতে আপনাদের দুয়েকটি ভুলের কথা কি মনে পড়ে? এ প্রশ্নেও চটে যান। একবাক্যে বলেন, না তাদের কোনো ভুল নেই। মানতেই রাজি নন যে, টানা দেড় দশক অসংখ্য ভুলকে সঠিক মনে করা আরেকটি মস্ত ভুল। আবার বর্তমানে বীরত্বের সাথে মাঠ দাবড়ানোরাও মানতে রাজি নন, ক্ষোভ, ঘৃনা কিংবা প্রতিহিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাও একটা সংস্কার। এ কথা ভীষণ নাপছন্দ তাদের।

নিদারুণ এই বাস্তবতার মধ্যেই আমাদের টিকে থাকা, এগিয়ে চলা। আদালত প্রাঙ্গণে এবং আদালতে সংঘটিত সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় বিবেকমান মানুষ উদ্বিগ্ন। যে কোনও অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তি যেমন অধিকার তেমনি তার নিরাপত্তা বিধান সরকারের দায়িত্ব। আটক ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করার সময় এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার যাতে করে এই ধারণা তৈরি না হয় যে, তিনি ন্যায়বিচার বঞ্চিত হতে পারেন। তারওপর অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ চাওয়া মাত্রই অভিযুক্তদের রিমান্ডে দেবার ব্যবস্থাও বিচার বিভাগের জন্যে খুব ভালো কাজ নয়। এ ধরনের কথা বর্তমানদের মানতে কষ্ট। বরং একে সমবিচার, ট্রিট ফর টেট বলতে পছন্দ তাদের। আদালত হওয়ার কথা পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। কারণ আদালত হচ্ছে আইনের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পীঠস্থান। একইসাথে একজন আসামী পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তি। তার পাশে আইন ছাড়া তখন আর কিছু নেই, কেউ নেই।সেই আদালতে একজন আসামীর উপরে কিভাবে হামলা হয়? ক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের হাত থেকে আসামীকে রক্ষা করা আদালতের দায়িত্ব। আইনজীবীরা আদালতের অংশ। তাদের ছাড়া বিচারকাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব। সেই আইনজীবীরাও নানা গালমন্দসহ আসামীকে আক্রমণ করেন।

যতোটুকু গেলা যায়, ততোটুকুই মুখে নেয়ার কথাকে তারা তাত্বিক মনে করেন। প্রাকৃতিক ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক ঐতিহাসিক কারণেই বাংলাদেশ যেন একটি যুদ্ধের ময়দান। এ ধরনের পারস্পরিক শত্রুতার ফাঁকেফুকেই বুঝি আমাদের কোনো মতে টিকে থাকা! আর উপায়হীন হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলা। আল্লাহ ভালো রেখেছেন বলে একটা টাটকা মিথ্যা বলা। এই ফাঁকে যে বিপ্লবের ইমেজে কালি লাগতে শুরু করেছে, তাও মেনে নেয়ার নিয়তি ভর করেছে। এ অবস্থার মাঝেই গত রবিবার রাত নয়টায় রূপগঞ্জের খাদুন এলাকায় সাবেক মন্ত্রী-এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর একটি কারখানায় আগুন-লুটপাট। দেশের অর্থনীতিতে আঘাত- দ্বিতীয় স্বাদহীনতার উপহার।নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে গাজী গ্রুপের টায়ার তৈরির কারখানায় আগুন লাগার পর থেকে অন্তত ১৭৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের স্বজনরা দাবি করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি তালিকা তৈরি করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। কিন্তু, এর সত্যতা নিয়েও নানা রাজনীতি ও অপকথা। আবার স্যাবোটাজের কথাও বলা হচ্ছে। কারখানাটি গোলাম দস্তগীর গাজীর তা যেমন সত্য, এটি দেশের অর্থনীতির একটি উপাদানও। সংকটে থাকা অর্থনীতিতে তা আরেকটা ধাক্কা। দেশে সরকার, মাঠে সেনাবাহিনী থাকার পরও তা কিভাবে হলো। আগামী প্রজন্ম যদি এটা জানতে চায়,কী বলবেন? তর্কে না গিয়ে ধরা যাক, গাজী বড় বাজে লোক। শেখ হাসিনার সহযোগী ছিল। তার বহু কাজ শাস্তিযোগ্য হতে পারে। বাংলাদেশে গাড়ির টায়ায় শিল্প যেখানে বিদেশ নির্ভর,সেখানে এই কারখানাটা দেশেই গড়ে তোলার কারনে কতো টাকা সাশ্রয় হতো! এখানে চার হাজার কর্মী ছিল। মানে চার হাজার পরিবার তাদের বাঁচার অবলম্বন হারিয়ে ফেললো!

এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘাড় ধরে ধরে সারা দেশে পদত্যাগ করানোর বিপ্লব দেখে যেতে হচ্ছে বিনা টিকিটের দর্শকের মতো। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ম বিধি অনুযায়ী পদায়ন ও বদল করা হয়। তাদের বলপূর্বক পদত্যাগের সুযোগ নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের কারও বিরুদ্ধে ন্যায়সংগত অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থাও নেয়া যায়। শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ সংস্কৃতিতে বিরক্ত। সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন, জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে প্রশাসন ভেঙে পড়তে পারে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পেতে অসুবিধা হবে। শিক্ষাঙ্গনে বল প্রয়োগ এবং কাউকে ব্যক্তিগতভাবে অপমান না করতে বলেছেন তিনি। যে যত অন্যায় করুক, নিয়মমাফিক যত দ্রুত পারা যায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা। আমরা অর্থলোভী-ব্যাক্তিত্বহীন, দলচাটা শিক্ষকের কথা শুনি। এরা সরকারি দলের পাতিনেতাদের সামনেও লেজ নাড়ে। সামান্যতম সুবিধা পাওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের সামনেই দুর্নীতিবাজদের তোষামোদ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শেষ করে দিয়েছে এমন হাজার হাজার শিক্ষক। তা নিচের দিকেও সংক্রমিত। হাইস্কুলের হেড মাস্টার আর কলেজের কিছু প্রিন্সিপাল ভর্তির সময় বেশি টাকা নেয়, পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপের সময় বেশি টাকা নেন। এমনকি টেস্টিমোনিয়াল ইস্যু করার সময়ও টাকা নেন। এসব শিক্ষককে ছাত্রছাত্রীরা সম্মান করে না। তবে সরকারি প্রাইমারি শিক্ষকদের দেখেছি শুধু অত্যাচারিত হতেই। নারায়ণগঞ্জের ওসমানিয়া সাম্রাজ্যে যে শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বোস করানো হয়েছিল, সেই ধারাবাহিকতাই বুঝি এখন কালের নিয়ম।

মনে রাখতেই হবে, কোনও রাজনৈতিক দলের গণ-অভ্যূত্থানে এই সরকার গঠন হয়নি। এই সরকার দেশের আপামর ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থান ও অশ্রুতপূর্ব রক্তদানের ফসল। ম্যান্ডেট ছাত্র-জনতার। ম্যান্ডেট রাষ্ট্র সংস্কারের। ছাত্র-জনতাকেই ঠিক করতে দিন সরকারের কর্মকৌশল, রোডম্যাপ এবং মেয়াদ। রাজনীতি মানেই ক্ষমতাসীন দলের নীতি করে ফেলার পরিণতিতে আজ না হোক কাল শেখ হাসিনার সরকারের পতন অনিবার্য ছিল। ১৫ বছর ৭ মাসের অন্যায়, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় তথা জনগণের সম্পদ লুটপাট, অবিরাম মিথ্যাচার, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার পরেও একটা জগদ্দল পাথরের মতো সরকার টিকে থাকতে পারে না। ৫ আগস্ট না হলেও একসময় তার পতন ঘটতোই। ছাত্র-জনতা শুধু শাসক দলের পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেনি। আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যও আন্দোলন করেনি।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

এইচআর/এএসএম