বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী? জিআরই, জিম্যাট অথবা টোফেল পরীক্ষা দেবেন? জেনে নিন আদ্যোপান্ত bdnewspost.com
- আপডেট সময় : ০৩:৫০:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে
বিদেশে উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনেকের কাছেই এক অচিন্ত্যনীয় স্বপ্ন। আমরা বাংলাদেশীরা বাই বর্ন মেধাবী। কিন্তু এটা নিদারুণ আফসোসের ব্যাপার যে বাংলাদেশে অনেক মেধাবী ছাত্র, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেবল মাত্র নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না, সেই সুযোগে আমাদের আশে পাশের দেশ গুলি যেমনঃ ভারত, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম ও চীন এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছে। উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিদেশে যাওয়াটা আমাদের অনেকের কাছেই বেশ কষ্টসাধ্য মনে হলেও আসলে তা নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পড়াশোনার জন্য বিদেশে যাওয়ার ঘটনা ঘটে প্রধানত উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোনার পর। অবশ্য কেবল আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে নয়, পোস্ট গ্রাজুয়েট বা ডক্টরেট করতেও বিদেশে যান অনেকে। কিন্তু সংখ্যাটা নেহাতই নগণ্য। খুব কম স্টুডেন্ট পাওয়া যায় যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত আছেন।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা – জন্য জিআরই, জিম্যাট, টোফেল পরীক্ষা
দেশের বাইরে পড়াশোনার এই যে স্বপ্ন, সেটি বাস্তবায়নের জন্য বেশ আগে থেকে প্রস্তুতি প্রয়োজন। কেবল পরীক্ষায় ভালো ফল করলেই হবে না,সাথে ভালো একটা শক্ত গাঁথুনিও দরকার। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা,অস্ট্রেলিয়া,নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে প্রধান ভাষা ইংরেজী হওয়ায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিশেষ অসুবিধা হয় না। কিন্তু চীন, জাপান, রাশিয়া, ফ্রান্স বা জার্মানীর মত দেশগুলোয় প্রধান ভাষা ইংরেজী নয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব দেশে পড়তে যেতে হলে ঐ দেশের ভাষাটা শিখে গেলে সুবিধা হয়। কিন্তু এসব দেশেও ইংরেজীতে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
তবে যেখানেই উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান না কেন, আপনাকে কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে আপনাকে। এবং পরীক্ষায় ভাল স্কোর তুলতে হবে। এই সব পরীক্ষার মধ্যে আছেঃ
- আইইএলটিএস
- টোফেল
- জিআরই
- জিম্যাট
- স্যাট
মুল আলোচনায় যাওয়ার আগে আসুন আমরা এই পরীক্ষাগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেইঃ
আইইএলটিএস
‘আইইএলটিএস’ হচ্ছে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সনদ, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। IELTS (The Inteational English Language Checking out Machine) । যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় তাদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা কিংবা ভিসার আবেদন করতে ভালো আইইএলটিএস স্কোর থাকতে হয়। আইইএলটিএস পরীক্ষাপদ্ধতি দুই ধরনের-‘একাডেমিক’ ও ‘জেনারেল’। উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যেতে ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের ‘একাডেমিক আইইএলটিএস’ টেস্টে অংশ নিতে হয়। যে কেউ এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। এ জন্য কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই।
স্যাট
স্কলাসটিক অ্যাপটিচ্যুড টেস্ট এবং স্কলাসটিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট সংক্ষেপে পরিচিত স্যাট নামে। আমেরিকার কলেজগুলোতে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার জন্য স্যাট স্কোর থাকা প্রয়োজন। আমেরিকার অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কলেজ বোর্ড স্যাটের সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে। ১৯০১ সাল থেকে চলে আসা এ পরীক্ষার নাম ও পরীক্ষার পদ্ধতি বেশ কয়েকবারই পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে প্রবর্তিত নিয়ম অনুযায়ী স্যাট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় তিন ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারের স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার আরেফিন জাহান বলেন, ‘বিদেশে প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেগুলো অর্থনৈতিকভাবে ছাত্রদের সহায়তা করে থাকে। এ সহায়তাটুকু যেকোনো ছাত্র সহজেই পেতে পারে। তার জন্য তাকে স্যাট-১-এর পাশাপাশি স্যাট-২ পরীক্ষাটি দিতে হবে।
টোফেল
বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজির পরীক্ষা হল (TOEFL-The Check of English as a International Language). প্রাতিষ্ঠানিক ইংরেজি বোঝার ক্ষমতা এ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে নেওয়া হয়। বিদেশে অবস্থানরত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার অন্যতম প্রয়োজনীয় পন্থার একটি এই টোয়েফল পরীক্ষা। টোয়েফল পরীক্ষার ফলাফল দুই বছরের জন্য কার্যকর থাকে। কারণ, এর পরে একজন ব্যক্তির ইংরেজি বলা ও বোঝার ক্ষমতার পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ কারণেই সদ্য টোয়েফল দেওয়া ফলাফলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
জিআরই
“গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন (Graduate Report Exam)” –কে সংক্ষেপে বলা হয় “জি আর ই (GRE)”। এটি মূলতঃ এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিস (ETS) –এর একটি রেজিস্টার্ড এডুকেশনাল ব্র্যান্ড, তাই একে লেখা হয় GRE®। আমেরিকার ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে (ব্যাচেলর ডিগ্রির পর এমএস/ পিএইচডি প্রোগ্রাম) ভর্তির জন্য জি আর ই অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়।
সোজা কথা GRE একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড পরীক্ষা যা অনেক দেশের অনেক ইউনিভার্সিটিতে (বিশেষ করে উত্তর আমেরিকাতে) গ্র্যাজুয়েট স্টাডি (মাস্টার্স বা পিএইচডি) করার জন্য লাগে। প্রধানত science & arts ব্যকগ্রাউন্ড এর স্টুডেন্টদের এটা লাগে। Trade ব্যকগ্রাউন্ডের জন্য লাগে GMAT; তবে অনেক বিজনেস স্কুল আজকাল GRE একসেপ্ট করছে।
জিম্যাট
জিম্যাট (GMAT) এক ধরণের মানদন্ড নির্ধারণকারী পরীক্ষা (Standardized Check). যার পুরো নাম Graduate Control Admission Check. সাধারণ ব্যাবসায়িক প্রশাসন সম্পর্কিত ডিগ্রী (MBA) নিয়ে উচ্চ শিক্ষায় পাড়ি জমাতে চাইলে জিম্যাট দরকার হয়। জিম্যাট পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষা নেওয়া, মানদন্ড নির্ধারণ করা-এ জাতীয় সব কাজই করে থাকে GMAC (Graduate Control Admission Council)
জিআরই, জিম্যাট, স্যাট ও টোফেল প্রস্তুতি সংক্রান্ত সমস্যা
এই সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য অনলাইনে প্রচুর রিসোর্স রয়েছে। এছাড়া রয়েছে বই ও ভিডিও টিউটোরিয়াল। দেশে আছে কয়েকটি কোচিং সেন্টার, তাছাড়া বেশ কিছু বিদেশী এডুকেশনাল ওয়েবসাইট রয়েছে যারা অনলাইনে কোর্স করায় এবং নানা ধরণের টুলস প্রদান করে থাকে স্টুডেন্টদের কাছে। কিন্তু এই সব অনলাইন কোর্স করার জন্য অনলাইনে পেমেন্ট করতে হয়। অনলাইনে পেমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও নানা কারণে পিছিয়ে থাকার কারণে এই সব কাজে বেশ ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। তাহলে সমাধান কি? সমাধান আছে, একদম সহজ। সে কথায় আসছি একটু পরে।
জিআরই, জিম্যাট, স্যাট ও টোফেল এর রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
স্যাট ও টোফেল, জিআরই, জি-ম্যাট পরীক্ষার ফরম এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য পেতে হলে আমেরিকান সেন্টারে যোগাযোগ করতে হবে। দুই ভাবে নিবন্ধন করা যাবে। অনলাইন ও ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে। যাঁদের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড আছে, তাঁরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। অন্যথায় যেসব ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের কাজ করে তাঁদের মাধ্যমে ব্যাংক ড্রাফট করে নিবন্ধন করতে হবে।
টোফেলের জন্য লাগবে ১৫০ ডলার।
স্যাট-১ -এর জন্য লাগবে ৭১ ডলার।
জিআরই-১৯০ ডলার
জি-ম্যাট -২৫০ ডলার
অনলাইনে পরীক্ষার সাত দিন আগে নিবন্ধন করলেই হবে। টোফেল, স্যাট, জিআরই পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাংক ড্রাফট করে নিবন্ধন করতে চাইলে তা করতে হবে পরীক্ষার অন্তত চার সপ্তাহ আগে। তবে জি-ম্যাটের ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহ আগে ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে নিবন্ধনের পর পরীক্ষার সময় যেন ছয় মাস পার হয়ে না যায়। আর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অবশ্যই পাসপোর্ট থাকতে হবে।
পরীক্ষার ফিস পেমেন্ট সংক্রান্ত সমস্যা
আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী প্রতিবছর এই সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নেয়। তবে এদের প্রায় সবাই পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময় একটা সমস্যায় পড়ে। তা হচ্ছে- কীভাবে এক্সাম ফি পরিশোধ করব। যেহেতু এই সকল পরীক্ষার (আইইএলটিএস ব্যতিত) ফিস অনলাইনে পেমেন্ট করতে হয়, তাই বাংলাদেশের মত থার্ড ওয়ার্ড কান্ট্রি থেকে ফি প্রদান করা বেশ ঝামেলার। আমাদের দেশে মাস্টারকার্ড – ভিসা কার্ডের অপ্রতুলতা ও পেপাল না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে এক্সাম ফি প্রদান করে। এজেন্টদের কমিশন দিতে গিয়ে একজন শিক্ষার্থীর অনেক অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়। অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়। অনিরাপদ পেমেন্টের কারণে অনেক ক্ষেত্রে এক্সাম ফি সঠিক রূপে জমা হয়না, এবং শিক্ষার্থী ভোগান্তির শিকার হয়। আমাদের দেশে ডাচ বাংলা ব্যাংক পরীক্ষার ফি প্রদানের জন্য এক ধরণের ভার্চুয়াল কার্ড ইস্যু করে। তাতে অনেক বেশি চার্জ দিতে হয় এবং আগে থেকে কার্ড ইস্যু না করতে পারলে বেশ হয়রানির শিকার হতে হয়! তাহলে শিক্ষার্থীদের সহজ সমাধান কি?
আপনারা হয়ত ইতিমধ্যে জেনে গেছেন গ্লোবাল পেমেন্ট সার্ভিস QCard বাংলাদেশে সার্ভিস কার্যক্রম শুরু করেছে। আমরা জানি যে এই প্রিপেইড কার্ড দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করা যায়। কিন্তু যে তথ্যটা অনেকেই জানেন না, তা হচ্ছে QCard এর দ্বারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফিস প্রদান করা যাচ্ছে! তাছাড়া আপনি যেকোনো বিদেশী ওয়েবসাইট থেকে ভাল মানের কোর্স করে এই কার্ড দিয়ে পরিশোধ করতে পারবেন। শুধু তাই নয়! পরীক্ষার পর বিদেশে যাওয়ার জন্য এপ্লাই করতে গেলে এপ্লাই ফর্ম ফিল আপ করতেও অনলাইনে পেমেন্ট করা লাগবে। এই কাজেও আপনাকে সাহায্য করতে কিউ কার্ড! বিদেশে ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি ফি দেওয়া, টিউশন ফি দেওয়া- এই সব পেমেন্ট করা যাবে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা – জেনে নিন কীভাবে প্রস্তুত হবেনঃ
এটা নিশ্চয়ই আপনি জানেন যে,একসময় বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সচ্ছলতাই মুখ্য বিষয় ছিল। কেবল উচ্চবিত্তের সন্তানেরাই এ নিয়ে ভাবত। কিন্তু বর্তমান চিত্র ভিন্ন! এখন কেবল অর্থ থাকলেই সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার মান, সুযোগ সুবিধা, চাহিদা, ভবিষ্যৎ প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয় প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই আপডেটেট থাকা জরুরি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি হয়তো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের চাহিদা অনুযায়ী একটা আবেদন করলেন, কিন্তু এ বছর তা পরিবর্তিত হয়ে গেল। আপনি সুযোগ হারাতে পারেন। কিংবা গত বছর আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে স্কলারশিপ ছিল না, যা এ বছর আছে। না জানার কারণে আপনি সুযোগ হারাতে পারেন। তাই নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন অনলাইনে, চোখ রাখুন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে।
সঠিক উপায়ে প্রস্তুত করুন নিজেকে:
বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নির্ধারিত চাহিদা আছে। তবে তুলনামূলকভাবে কিছু মৌলিক চাহিদা থাকে। যেমন-ইংরেজি ভাষাজ্ঞান, জিমেট, স্যাট, জিআরই ইত্যাদি। আপনি যদি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে চান, তবে এ সবকিছু গুরুত্বপূর্ণ কোর্স করে রাখুন। কাজে আসবে। মনে রাখবেন, যা আপনি অর্জন করবেন তা কখনো বৃথা যাবে না। অনেকে মনে করে, বাইরে না গেলে IELTS বা TOEFL করে লাভ কী? কিন্তু এসব জ্ঞান কিন্তু আপনার দেশেও চাকরি বা ব্যক্তিগত জীবনে উপকারে আসবে। তাই নিজেকে যতটুকু সম্ভব প্রস্তুত রাখুন। আরেকটা বিষয় হলো, কোন বিশ্ববিদ্যালয় যদি আপনার অর্জিত কোনো কোর্স না চেয়েও থাকে, তথাপি আপনি CV-তে উল্লেখ করলে প্রতিযোগিতায় প্রায়োরিটি পাবেন।
সব ব্যাপারে না গিয়ে স্পেসিফিক হোন:
একটা বিষয় আমরা প্রায়ই খেয়াল করি, অনেকেই বলেন আমি বিদেশ আসতে চাই বা ইউরোপ আসতে চাই। তারা কোন দেশে আসবেন, এটাও কনফার্ম না, বিষয় তো দূরের কথা। এটা হলো অনেকটা আমাদের ছোটবেলার বায়নার মতো। ওর আছে আমারও লাগবে। ও গেছে আমিও যাব। কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষা কোনো বায়না নয়, এটা মেধা দিয়ে আপনাকে অর্জন করে নিতে হবে। তাই প্রথমেই লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনার বয়স, উদ্দেশ্য বা লাভ-এসব বিষয় বিবেচনা করুন। উদাহরণ হিসেবে মেধা বা অর্থ থাকার পরও আপনার পারিবারিক অবস্থানের কারণে আপনার বাইরে আসা হয়তো যুক্তিসংগত না-ও হতে পারে। তাই সব বিবেচনা করে কোমর বেঁধে নামুন। সফলতা আসবেই।
সময়ের সদ্ব্যবহার করুন এবং সময়জ্ঞান বাড়ান:
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি ও স্কলারশিপের সময়সীমা নির্দিষ্ট, যা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবসময় কিছু জিনিস প্রস্তুত রাখুন। CV, Motivation Letter, Advice Letter ইত্যাদি। অনেক সময় আবেদন করতে করতেই সময় ফুরিয়ে যায়। আর তা ছাড়া পোস্টে কাগজপত্র পাঠাতেও সময় ও অর্থের প্রয়োজন। তাই সময়ের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখুন।
বাজেট বা অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আগে থকে ভাবুন:
আপনি যদি সত্যিকার আগ্রহী হন তবে বাজেট করুন। আপনার পক্ষে কতটুকু ব্যয় করা সম্ভব, তা জেনে নিন। সে অনুযায়ী আবেদন করুন। কারণ, এসব বিষয় না ভেবে আবেদন করলে পরে আর্থিক সমস্যার কারণে তা ভেস্তে যায় এবং আবেদন বা অন্য খরচগুলো অপচয়ে পরিণত হয়। আবার দেখা যায়, অনেকে বড় বড় বাজেট করেন, কিন্তু আবেদন করতে পোস্ট খরচ দেখে ঘাবড়ে যান। তাই বলি, বাজেট করুন এবং সে অনুযায়ী সামনে এগোন। এলোমেলো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে, বলাই বাহুল্য।
নিয়মিত ও সঠিক পন্থায় পড়ার অভ্যাস করুন:
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। অনেকে কেবল প্রশ্ন করেন, ভাই, বিদেশে কীভাবে যাব? কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব? সুযোগ সুবিধা কেমন? ভবিষ্যৎ কেমন? ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তাদের যখন কোনো তথ্য দেওয়া হয়, তারা পড়েন না। আমরা পেজে অনেক লিংক পোস্ট করি যাতে সব তথ্যই পাওয়া যায়। কিন্তু একই প্রশ্ন বারবার করা হয়-লিংকগুলো অনেকে দেখেনই না। তাই পড়ার অভ্যাস করুন। যতটুকু সময় অনলাইনে থাকেন, তার কিছু সময় বিভিন্ন দেশের শিক্ষা সাইটগুলো ভিজিট করুন। আমাদের পেজের বিভিন্ন সময় পোস্ট করা লিংকগুলো পড়ুন। এতে আপনি তো জ্ঞাত হবেনই, আবার অন্যকেও পরামর্শ দিতে পারবেন।
বিভ্রান্ত হবেন না:
আপনি যদি কনফিডেন্ট হন, কেউ আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। তাই কনফিডেন্স খুবই জরুরি। একটা বিষয় মনে রাখবেন, টাকা দিয়ে কখনো ভিসা কেনা যায় না। আপনার যোগ্যতা থাকলেই কেবল আপনি এডমিশন এবং ভিসা পাবেন। তাই প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হবেন না। অনেকে এডমিটেড হওয়ার পরও আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভিসা পেতে ব্যর্থ হন। একটা সাধারণ জ্ঞান হলো, একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি আপনাকে ছাত্র হিসাবে গ্রহণ করে, তবে দূতাবাস ভিসা দিতে বাধ্য; যদি না কোনো মেজর ত্রুটি থাকে। তাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অগ্রসর হোন।
সর্বোপরি, চেষ্টা করুন, সফলতা আসবে। মনে রাখবেন, এটা আপনার জীবন এবং এর লক্ষ্য আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে। আপনাদের সবারই সফলতা কামনা করছি।
কোথায় পাবেন বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে তথ্য?
বিদেশে উচ্চশিখা নিতে যাওয়ার জন্য কোন কোন ওয়েবসাইটে তথ্য পাওয়া যাবে তা কোথাও এক সাথে নেই। আমি যারা বিদেশে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহী তাদের জন্য উপকার হবে, এরকম অনেকগুলো ওয়েবসাইটের নাম এক সাথে করে শেয়ার করলাম। আশাকরি, এক যায়গাতেই সব পাবেন এবন আপনার উপকার হবে এ থেকে।
১ । অষ্ট্রেলিয়ার শিক্ষা সংক্রান্ত বিভন্ন তথ্য জানার জন্য এ সাইট টি ভিজিট করতে পারেন ।
২। এই সাইটটিতে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট সহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক তথ্য দেয়া আছে । আপনি ইচ্ছে করলেই এ সাইট থেকে আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন । এ সাইটটির আর একটি সুবিধা হল এখানে সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে একটি ইনডেক্সের মধ্যে বর্ণানুক্রমিক ভাবে সাজানো হয়েছে ।
৩। http://www.globaled.us – এখানে মানচিত্রের মধ্যে চিহ্নিত বিভিন্ন দেশের উপর ক্লিক করলেই স্ক্রীনে ভেসে আসবে ঐ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও অন্যান্য তথ্য ।
৪। এ সাইটটিতে বিশ্বের সব মহাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট সহ বিভিন্ন তথ্য দেয়া আছে । এ ছাড়া এখানে স্কলারশিপ , বিভিন্ন টেস্ট ও শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু জরুরি তথ্য দেয়া আছে ।
৫। http://www.wes.org – আমেরিকা , কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির তথ্য , ক্রেডিট ট্রান্সফার , আর্থিক সহায়তার তথ্য , ভর্তি পরীক্ষা এবং TOFEL,IELTS,SAT,GRE,GMAT এর তথ্য সমৃদ্ধ এ সাইটে আরও আছে আমেরিকায় ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত সকল তথ্য ও চাকরির খবরাখবর।
৬। http://www.educationusa.state.gov – মার্কিন ভিসা , মার্কিন শিক্ষা মেলা সংক্রান্ত তথ্য , বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য জরুরি তথ্য , আর্থিক সহযোগিতা , বিভিন্ন কোর্স সম্পর্কে তথ্য ও মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্যে সমৃদ্ধ এ সাইটটি আমেরিকায় অধ্যয়নে আগ্রহীগণের জন্য চমৎকার এক দিকনির্দেশনা / গাইডলাইন ।
৭। ইয়াহুর এ সাইটটিতে ঢুকে আপনি যে বিষয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী সেই বিষয়ের উপর ক্লিক করলে বিশ্বের যে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঐ বিষয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা আছে তাদের বিভিন্ন তথ্য ধারাবাহিক ভাবে আপনার সামনে উপস্থাপিত হবে ।
৮। http://www.cypruseducation.com – সাইপ্রাসে পড়াশোনার যাবতীয় তথ্যসমৃদ্ধ এ সাইটে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও বর্ণনা দেয়া আছে ।
৯। http://www.einnews.com – এ সাইটটিতে সাইপ্রাসে পড়াশোনা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও নিয়মকানুন দেয়া আছে ।
১০। http://www.exchanges.state.gov – এ সাইটটিও আমেরিকায় অধ্যয়নে আগ্রহীদের জন্যে এক তথ্যবহুল সাইট ।
১১ । http://www.iic.org – বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিষয়ক তথ্যসমৃদ্ধ এ সাইটটি একটি অলাভজনক সংস্থার ওয়েবসাইট ।
১২ । http://www.iefa.org – স্কলারশিপ , ঋন , পড়াশোনায় আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াও উচ্চশিক্ষার অন্যান্য তথ্যসমৃদ্ধ এ সাইটটিতে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য ।
১৩ । http://www.internationalstudent.com – এ সাইটটিতে আমেরিকা , অষ্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা , আবাসন ব্যবস্থা , স্কলারশিপ তথ্য , আবেদন প্রক্রিয়া , কোর্স নির্ধারন তথ্য ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ইন্সু্রেন্স পরিকল্পনা , স্টুডেন্ট জব , TOFEL , ইন্টার্নশিপ ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য ।
১৪ । http://www.financialaidofficer.com – এ ওয়েব সাইটটিতে মূলত স্কলারশিপ ও আর্থিক সহযোগিতা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত দেয়া আছে যা উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ পেতে আগ্রহীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ।
১৫ । http://www.f1study.com – বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই , আবেদন পাঠানো , আর্থিক সহায়তা , ভিসা পরামর্শ ,SAT, TOFEL তথ্য , ভিসা প্রক্রিয়া তথ্য ও বিভিন্ন ইন্সুরেন্স তথ্যে সমৃদ্ধ এ ওয়েবসাইটটি উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশগামীদের জন্য আদর্শ একটা সাইট ।
১৬ । http://www.univsource.com – এ সাইটটিতে রয়েছে আমেরিকা ও কানাডার শিক্ষা সম্পর্কাত যাবতীয় তথ্য ।
১৭ । এ সাইটটিতে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন কলেজগুলোর রিভিউ ।
১৮ । এ সাইটটিতে ধারাবাহিকভাবে ছাত্রছাত্রীদের জব প্লেসমেন্ট , B1/F1ভিসা প্রোগ্রাম নিয়ে তথ্যের পাশাপাশি রয়েছে গ্রীণকার্ডধারীদের জন্য চাকরির তথ্য ।
১৯ । http://www.internationalscholarships.com – এ সাইটটিতে রয়েছে আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ ও আর্থিক সহযোগিতার বিভিন্ন সোর্স সম্পর্কিত তথ্য ।
২০ । http://www.collegeconfidencial.com – বিভিন্ন কলেজে ভর্তির তথ্য এবং এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সুবিধা সম্বলিত এ সাইটটি ভিজিট করতে পারেন আগ্রহীগণ ।
২১ । http://www.howstuffworks.com – কিভাবে ভাল কলেজ বাছাই করবেন তার পরামর্শ ও ও উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে আগ্রহীগন ভিজিট করতে পারেন এ সাইটটি ।
২২ । http://www.nacacnet.org – এ সাইটটি Nationwide Affiliation for varsity Admission Counselingনামক একটি প্রতিষ্ঠানের । এখানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট এডুকেশন সংক্রান্ত তথ্য সহ উচ্চশিক্ষার আরো তথ্য সংগৃহীত আছে ।
২৩। http://www.edupass.org – আমেরিকান কলেজগুলোর ভর্তির তথ্য , পড়াশোনার খরচ , স্কলারশিপ তথ্য ও আমেরিকায় থাকি-খাওয়ার তথ্য সংক্রান্ত এ সাইটটি আমেরিকায় অধ্যয়নে আগ্রহীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক সাইট ।
২৪ । http://www.euroeducation.web – ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সহ আমেরিকা-কানাডার শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য জানার জন্য এ সাইটটি ভিজিট করতে পারেন । এ ছাড়াও এ সাইটটিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান তথ্য দেয়া আছে ধারাবাহিকভাবে ।
২৫। www.dmoz.org – ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নানান তথ্যসহ সেসব দেশের নানান তথ্যসহ সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ওয়েবসাইটে ঢোকার সুবিধাসহ বিভিন্ন তথ্য রয়েছে এ সাইটে।
২৬। http://www.studyabroad.com – বিদেশে পড়তে যেতো ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স , ইন্টার্নশিপ সহ প্রয়োজনীয় বহু বিষয়ের তথ্য পাবের এখানে ।
২৭। শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য সমৃদ্ধ এ সাইটটিতে ঢুকে ইউনিভার্সিটি সেকশনে গেলেই বিশ্বের শত শত ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে এবং তাতে ক্লিক করেই সরাসরি সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটটি ভিজিট করা যাবে ।
২৮। http://www.goabroad.com – এটি তথ্যবহুল এবং লিংকবিশিষ্ট একটি ওয়েবসাইট । বিষয় বা দেশভিত্তিক “সার্চ” অপশনে গিয়ে এই ওয়েবসাইটটি থেকে আপনি সংগ্রহ করতে পারেন আপনার কাঙ্খিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান , ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল , ইন্টার্নশিপ , স্কলারশিপের জন্য প্রতিষ্ঠান এবং এরকম কিছু প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা , ফোন নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি বহুবিধ জরুরি তথ্য ।
২৯। http://www.transitionsabroad.com – শিক্ষা , চাকরি , ভ্রমণ প্রভৃতি কারনে বিদেশে গমনেচ্ছুদের জন্য transitions out of the country পত্রিকার ডাটাবেজ এটি । শিক্ষা , কাজ , ইন্টার্নশিপ , ভাষা শিক্ষা , অভিভাসন ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখানে রয়েছে ।
৩০। কোথায় এবং কিভাবে আপনি ভাষা শিখতে পারেন তার একটি বিস্তৃত তথ্যভান্ডার হল এ সাইটটি। এই ডাটাবেজে প্রায় ৬০০০ ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্সের তথ্য আছে । পৃথিবীর ২০ টি ভাষা এই কোর্সগুলোর অন্তর্ভুক্ত ।
আশা করি বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক এই পোষ্টটি আপনাদের একটু হলেও উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।
তথ্য সুত্রঃ ইন্টারনেট।