ঢাকা ১০:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি/নোটিশ ::
সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||
সদ্য প্রাপ্ত খবর ::
ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি DC Workplace Activity Round 2025 bdnewspost.com মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে নিয়োগ CS Munshiganj Process round 2025 bdnewspost.com রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি RMMC Activity Round 2025 bdnewspost.com বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি bdnewspost.com বাংলাদেশ পুলিশ স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর নিয়োগ Police Particular Department Task Round 2025 bdnewspost.com গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল মডেল ইউনাইটেড নেশনস- এর সপ্তম আসর অনুষ্ঠিত bdnewspost.com কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে কিছু তথ্য bdnewspost.com ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে উদযাপিত হল ‘কমনওয়েলথ স্কলার্স ওয়েলকাম হোম’ bdnewspost.com হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়োগ Habiganj DC Place of work Activity 2025 bdnewspost.com জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি DPHE Process round 2025 bdnewspost.com

পা হারানো ছেলেকে নিয়ে অথই সাগরে শাহীন আলম

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:১৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪ ৫৫ বার পড়া হয়েছে


রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), যা পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত। এর তৃতীয় তলায় ‘বি’ ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেই দেখা যায় একাধিক তরুণ বিছানায় শুয়ে আহাজারি করছেন। তাদের আহাজারি-কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ।

তাদেরই একজন আলী আশরাফ, বাবার নাম আলতাফ হোসেন। বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ। খুলনার মণ্ডল জুট মিলে কর্মরত ছিলেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৫ আগস্ট দুপুর দেড়টায় খুলনা এলাকায় বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুলি লাগা পায়েই আবার ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছেন। ছিন্নভিন্ন পায়ের গোড়ালি থেকে কেটা ফেলা হয়েছে। অন্য পা থেকে মাংস কেটে ক্ষতস্থানে লাগানো হয়েছে। ক্ষত পায়ের যন্ত্রণায় কাতর আশরাফ, জ্বর চলে এসেছে গায়ে।

বুধবার (২৮ আগস্ট) পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আশরাফের জ্বর কমানোর জন্য পানি-পটি দিচ্ছেন ভাই রুহুল আমিন ও বোন আসমা খাতুন। পাশের বেডের রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদের সঙ্গে বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি। তবে আশরাফকে নিয়ে যে ভাই-বোনের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে তা অল্প কথাতেই বোঝা গেলো।

শুধু আশরাফ নন, এই ওয়ার্ডের ৫৬টি বেডের সবকটিতেই ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুলির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হওয়ায় তাদের কারও পা কেটে ফেলা হয়েছে। কারও আবার পায়ে রড-রিং লাগানো হয়েছে। কারও গুলি লেগে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে পায়ের হাড়।

এমনই একজন আলী আহসান। জন্মস্থান সাতক্ষীরা জেলার প্রতাবনগর ইউনিয়ন। এলাকার একটি মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ে সে। বৈমষ্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সোচ্চার ছিল আলী আহসান। স্লোগান লেখা থেকে শুরু করে মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিল আলী আহসান। পুরো আন্দোলনে কোনো বিপদ না হলেও শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন গুলিতে পা হারাতে হয়েছে আলী আহসানকে।

পা হারানো একমাত্র সন্তানকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েছেন দিনমজুর পিতা শাহীন আলম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। ফলে এই দিনে বিজয় মিছিল বের করা হয়। বিকেল ৩টার সময় প্রতাপনগরের নাকনা গ্রামে বিজয় মিছিল বের হয়। এই বিজয় মিছিলে নির্বিচারে গুলি করে যুবলীগ-ছাত্রলীগ। ওরা যদি জানতো হাসিনা পালাইছে, তাইলে ছেলেকে পা হারাতে হতো না। হাসিনা পালাইছে জানলে কি গুলি করার সাহস পেতো? গুলি না করলি আমার ছেলের পাও হারাইতো না।’

শাহীন আলম জানান, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন ৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটায়। অথচ বিকেল ৪টার সময় বিজয় মিছিল বের করলে গুলি চালানো হয়। ছাত্রলীগ-যুবলীগ মুখোশ পরে মিছিলে নির্বিচারে গুলি করে। এতে তিনজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া অসংখ্য মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যেই ছিল আলী আহসান।

আলী আহসানের ডান পায়ে একাধিক গুলি লাগে। প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, এরপর খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শরীর ফ্যাকাসে রং ধারণ করে। পায়ের রগ ছিড়ে যায়। হার্টেও জটিলতা দেখা দেয়। যে কারণে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ইবনে সিনা থেকে পরে নিটোরে ভর্তি করা হয়।

ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত দিনমজুর বাবা শাহীন আলম/জাগো নিউজ

গত ১৪ আগস্ট আলী আহসানের ডান পা কেটে ফেলা হয়। একাধিক গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কারণে পুরো পা কালো হয়ে পচন ধরেছিল। এই পচন শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ কারণেই মূলত পা কেটে ফেলতে হয়। তার আগেই তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে দিনমজুর বাবা শাহীনের। টাকা নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ থাকলেও শাহীন আলমের এখন যত চিন্তা পা হারানো ছেলেকে নিয়ে।

শাহীন আলম বলেন, ‘নিজের বসতভিটাও নেই। নদীভাঙনে সব হারিয়েছি। অন্যের বাড়িতে থাকি। ছেলের জন্য তিন লাখ টাকা ঋণ। পাওনাদারেরা ধরবে, সেই ভয়ে এলাকায় যেতে পারি না। জমিজমাও নেই যে বিক্রি করবো। এখন অথই সাগরে পড়ে গেছি।’

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, আন্দোলনে আহতরা নিটোরের তিনটি বিশেষায়িত ওয়ার্ডে ভর্তি। সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যারা পা হারিয়েছেন, ভবিষ্যতে বিনামূল্যে নিটোরের পক্ষ থেকে তাদের কৃত্রিম পা লাগানো হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম উজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের সবার খরচ নিটোর বহন করছে। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ, অপারেশন সব আমরা বিনামূল্যে দিচ্ছি। আন্দোলনে আহত রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড একটা ওয়ার্ড করা হয়েছে। যেসব রোগী হাত-পা হারিয়েছেন তাদের কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হবে। আমাদের পক্ষে যা কিছু করা দরকার, সামর্থ্য অনুযায়ী করবো। কোনো কিছুর ত্রুটি রাখছি না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়করাও আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ভবিষ্যতেও আহতদের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

বিক্ষুব্ধ আনসার সদস্যদের হামলায় আহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার শিকারের আগে তিনি আন্দোলনে আহতদের বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘সদ্যবিদায়ী স্বৈরাচারের গুলিতে এসব তরুণ পঙ্গু হয়েছেন। সুতরাং রাষ্ট্রই তাদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব তুলে ধরবো যেন এসব তরুণের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। আমি মনে করি, এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব এসব তরুণের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।’

এমওএস/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।


নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

পা হারানো ছেলেকে নিয়ে অথই সাগরে শাহীন আলম

আপডেট সময় : ১০:১৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪


রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), যা পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত। এর তৃতীয় তলায় ‘বি’ ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেই দেখা যায় একাধিক তরুণ বিছানায় শুয়ে আহাজারি করছেন। তাদের আহাজারি-কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ।

তাদেরই একজন আলী আশরাফ, বাবার নাম আলতাফ হোসেন। বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ। খুলনার মণ্ডল জুট মিলে কর্মরত ছিলেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৫ আগস্ট দুপুর দেড়টায় খুলনা এলাকায় বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুলি লাগা পায়েই আবার ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছেন। ছিন্নভিন্ন পায়ের গোড়ালি থেকে কেটা ফেলা হয়েছে। অন্য পা থেকে মাংস কেটে ক্ষতস্থানে লাগানো হয়েছে। ক্ষত পায়ের যন্ত্রণায় কাতর আশরাফ, জ্বর চলে এসেছে গায়ে।

বুধবার (২৮ আগস্ট) পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আশরাফের জ্বর কমানোর জন্য পানি-পটি দিচ্ছেন ভাই রুহুল আমিন ও বোন আসমা খাতুন। পাশের বেডের রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদের সঙ্গে বেশি কথা বলার সুযোগ হয়নি। তবে আশরাফকে নিয়ে যে ভাই-বোনের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে তা অল্প কথাতেই বোঝা গেলো।

শুধু আশরাফ নন, এই ওয়ার্ডের ৫৬টি বেডের সবকটিতেই ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুলির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হওয়ায় তাদের কারও পা কেটে ফেলা হয়েছে। কারও আবার পায়ে রড-রিং লাগানো হয়েছে। কারও গুলি লেগে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে পায়ের হাড়।

এমনই একজন আলী আহসান। জন্মস্থান সাতক্ষীরা জেলার প্রতাবনগর ইউনিয়ন। এলাকার একটি মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ে সে। বৈমষ্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সোচ্চার ছিল আলী আহসান। স্লোগান লেখা থেকে শুরু করে মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিল আলী আহসান। পুরো আন্দোলনে কোনো বিপদ না হলেও শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন গুলিতে পা হারাতে হয়েছে আলী আহসানকে।

পা হারানো একমাত্র সন্তানকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েছেন দিনমজুর পিতা শাহীন আলম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। ফলে এই দিনে বিজয় মিছিল বের করা হয়। বিকেল ৩টার সময় প্রতাপনগরের নাকনা গ্রামে বিজয় মিছিল বের হয়। এই বিজয় মিছিলে নির্বিচারে গুলি করে যুবলীগ-ছাত্রলীগ। ওরা যদি জানতো হাসিনা পালাইছে, তাইলে ছেলেকে পা হারাতে হতো না। হাসিনা পালাইছে জানলে কি গুলি করার সাহস পেতো? গুলি না করলি আমার ছেলের পাও হারাইতো না।’

শাহীন আলম জানান, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন ৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটায়। অথচ বিকেল ৪টার সময় বিজয় মিছিল বের করলে গুলি চালানো হয়। ছাত্রলীগ-যুবলীগ মুখোশ পরে মিছিলে নির্বিচারে গুলি করে। এতে তিনজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া অসংখ্য মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যেই ছিল আলী আহসান।

আলী আহসানের ডান পায়ে একাধিক গুলি লাগে। প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, এরপর খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শরীর ফ্যাকাসে রং ধারণ করে। পায়ের রগ ছিড়ে যায়। হার্টেও জটিলতা দেখা দেয়। যে কারণে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ইবনে সিনা থেকে পরে নিটোরে ভর্তি করা হয়।

ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত দিনমজুর বাবা শাহীন আলম/জাগো নিউজ

গত ১৪ আগস্ট আলী আহসানের ডান পা কেটে ফেলা হয়। একাধিক গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কারণে পুরো পা কালো হয়ে পচন ধরেছিল। এই পচন শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ কারণেই মূলত পা কেটে ফেলতে হয়। তার আগেই তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে দিনমজুর বাবা শাহীনের। টাকা নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ থাকলেও শাহীন আলমের এখন যত চিন্তা পা হারানো ছেলেকে নিয়ে।

শাহীন আলম বলেন, ‘নিজের বসতভিটাও নেই। নদীভাঙনে সব হারিয়েছি। অন্যের বাড়িতে থাকি। ছেলের জন্য তিন লাখ টাকা ঋণ। পাওনাদারেরা ধরবে, সেই ভয়ে এলাকায় যেতে পারি না। জমিজমাও নেই যে বিক্রি করবো। এখন অথই সাগরে পড়ে গেছি।’

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, আন্দোলনে আহতরা নিটোরের তিনটি বিশেষায়িত ওয়ার্ডে ভর্তি। সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যারা পা হারিয়েছেন, ভবিষ্যতে বিনামূল্যে নিটোরের পক্ষ থেকে তাদের কৃত্রিম পা লাগানো হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম উজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের সবার খরচ নিটোর বহন করছে। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ, অপারেশন সব আমরা বিনামূল্যে দিচ্ছি। আন্দোলনে আহত রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড একটা ওয়ার্ড করা হয়েছে। যেসব রোগী হাত-পা হারিয়েছেন তাদের কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হবে। আমাদের পক্ষে যা কিছু করা দরকার, সামর্থ্য অনুযায়ী করবো। কোনো কিছুর ত্রুটি রাখছি না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়করাও আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ভবিষ্যতেও আহতদের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

বিক্ষুব্ধ আনসার সদস্যদের হামলায় আহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার শিকারের আগে তিনি আন্দোলনে আহতদের বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘সদ্যবিদায়ী স্বৈরাচারের গুলিতে এসব তরুণ পঙ্গু হয়েছেন। সুতরাং রাষ্ট্রই তাদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব তুলে ধরবো যেন এসব তরুণের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। আমি মনে করি, এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব এসব তরুণের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।’

এমওএস/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।