নোয়াখালীতে পানিবন্দি ২০ লাখ মানুষের মানবেতর জীবন
![](https://bdnewspost.com/wp-content/uploads/2023/09/1695534648060.jpg)
- আপডেট সময় : ০৮:৪৫:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪ ৪২ বার পড়া হয়েছে
![](https://bdnewspost.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
টানা ভারী বৃষ্টি ও কুমিল্লা-ফেনী থেকে নেমে আসা ঢলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নোয়াখালীর ২০ লাখ মানুষ। তাদের বেশিরভাগই খাবার ও বাসস্থানের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
জেলার ৯ উপজেলার সবকটিতেই বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে লাখও মানুষ। খাল উদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনে সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তারা।
জানা গেছে, সুবর্ণচর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর ও সদর উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক উচ্চতায় জোয়ার হয়েছে। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
এদিকে বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে বৃষ্টি বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রবল বর্ষণে পানি বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
নোয়াখালী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামি ৪৮ ঘণ্টা ভারী বর্ষণ হতে পারে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে এখন মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। মাছের ঘেরসহ সব ভেসে গেছে। এতো পানি ৬০ বছর বয়সে কখনো দেখিনি। বৃষ্টি হলে পানি নেমে যায় কিন্তু এবার পানি নামছে না।
কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা রুবেল বলেন, হাঁটু পানি দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করেছে প্রভাবশালীরা। খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও খাল দখল করে বাড়িঘরও নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে পানি নামছে না। সেনাবাহিনী এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে খাল পরিষ্কার করলে জলাবদ্ধতা থাকতো না।
কবিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আলাবক্স তাহের টিটু জাগো নিউজকে বলেন, আজ এলাকার এক ভাই মারা গেছে। বেলা ১১টায় তার জানাজা পড়ে দাফন করার কোনো জায়গা পাইনি। পরে আড়াই কিলোমিটার দূরে এক জায়গায় কোনমতে দাফন করেছি।
সুবর্ণচর উপজেলার হারিচ চৌধুরীর বাজার এলাকার বাসিন্দা ফারজানা আক্তার বলেন, টানা বৃষ্টিতে বাড়ির উঠানে পানি জমেছে। রান্নাঘরেও পানি। রান্নাও করতে পারিনি। টিউবওয়েলের পানিতে ময়লা আসে। আমরা অসহায় অবস্থায় আছি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, মুছাপুর, চরফকিরা এবং চরএলাহী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন সব বাসিন্দারা অধিক ঝুঁকিতে থাকায় তাদেরকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করেছি। অস্বাভাবিক জোয়ারে বাঁধ এবং তৎসংলগ্ন এলাকার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও জানমালের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বলেন, জেলার ৯ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়ন ও পৌরসভা আক্রান্ত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষ প্রায় ১৯ লাখ ৮০ হাজার জন। এরমধ্যে ৩৮৮ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৩৬ হাজার ১১৫। পানিবন্দি এলাকায় ৮৮টি মেডিকেল টিম খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। জেলার ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও ১৭৫ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
ইকবাল হোসেন মজনু/এএইচ/এমএস