ঢাকা ১২:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি/নোটিশ ::
সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||
সদ্য প্রাপ্ত খবর ::
ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি DC Workplace Activity Round 2025 bdnewspost.com মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে নিয়োগ CS Munshiganj Process round 2025 bdnewspost.com রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি RMMC Activity Round 2025 bdnewspost.com বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি bdnewspost.com বাংলাদেশ পুলিশ স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর নিয়োগ Police Particular Department Task Round 2025 bdnewspost.com গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল মডেল ইউনাইটেড নেশনস- এর সপ্তম আসর অনুষ্ঠিত bdnewspost.com কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে কিছু তথ্য bdnewspost.com ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে উদযাপিত হল ‘কমনওয়েলথ স্কলার্স ওয়েলকাম হোম’ bdnewspost.com হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়োগ Habiganj DC Place of work Activity 2025 bdnewspost.com জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি DPHE Process round 2025 bdnewspost.com

তিনটি বুলেট লাগে সনজুর চোখে, দৃষ্টি হারানোর শঙ্কা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৭:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪ ১৯৬ বার পড়া হয়েছে

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে সারাদেশ যখন উত্তাল, তখন বিবেকের তাড়নায় প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন গাইবান্ধা সদর খোলাহাটি ইউনিয়নের সনজু মিয়া (২৬)। একপর্যায়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগও করেন। চলে যান ভারতে। এ খবরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন ছাত্র-জনতা। আনন্দ মিছিল সহকারে নেমে আসেন রাস্তায়। তবে সেই আনন্দ মিছিলে শরিক হতে পারেননি সনজু মিয়া। চোখ হারানোর শঙ্কা ও সারা শরীরে বুলেটের ক্ষতের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন তিনি।

উপজেলার মিয়া পাড়ার বাসিন্দা ইয়াসিন মিয়ার তিন সন্তানের মধ্যে বড় সনজু ছিলেন পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সংসারের হাল ধরার জন্য শহরের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করে পরিবারকে সাধ্যমতো সাহায্য করে আসছিলেন। কিন্তু তার জীবনে নেমে এসেছে এক ভয়াবহ বিপর্যয়।

সরেজমিন দেখা যায়, গাইবান্ধা শহরের প্রাইম হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টি সেন্টারের চিকিৎসা নিচ্ছেন সনজু। বাম চোখের ভেতর লাল হয়ে আছে। সারা শরীরের অসংখ্যা বুলেটের দাগ। তার মা বসে আছেন পাশে। শরীরের পাশ পরিবর্তন করতে পারছিলেন না। কথা বলার সময় তার শরীর কাঁপছিল। ভয় যেন তার অন্তর থেকে এখনো কাটেনি।

গত ৪ আগস্ট গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে একটি মিছিলে অংশ নিয়ে আহত হন সনজু মিয়া। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের অতর্কিত হামলায় তার বাম চোখে তিনটি এবং হাতে একটি রাবার বুলেট লাগে। গুরুতর আহত হয়ে সনজু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা তাকে দ্রুত গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রংপুরের গ্লোবাল আই অ্যান্ড হেলথ কেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে দুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সনজুকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বাংলাদেশ আই হসপিটালে পাঠানো হয়।

আই হসপিটালে সনজুর চোখ থেকে একটি রাবার বুলেট সফলভাবে অপসারণ করা সম্ভব হলেও বাকি দুটি বুলেট এখনো চোখের ভেতরে রয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তবে সনজুর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, যা দরিদ্র এই পরিবারের পক্ষে বহন করা অসম্ভব।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আহত সনজু মিয়া বলেন, ‘পুলিশ গুলি চালিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছিল, যাদের কোনো দোষ ছিল না। আমি সহ্য না করতে পেরে ৪ তারিখে ছাত্রদের মিছিলে যাই। হত্যার বিচার আর হাসিনার গদি থেকে নামানোর মিছিলে। মিছিলটি গাইবান্ধা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে গেলে পুলিশ অতর্কিতভাবে গুলি শুরু করে। গুলি লাগার পর বুঝতে পারি চোখে কিছু একটা লেগেছে। পরে লোকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। আমার বাম চোখে তিনটি রাবার বুলেট লাগে। ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে একটি রাবার বুলেট অপসারণ করা হলেও বাকি দুটি এখনো রয়ে গেছে। আমি বাম চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পারছি না। প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছি। এই চোখ দিয়ে আদৌ দেখতে পারবো কিনা জানি না!’

সনজুর মা মনজু রানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশের রাবার বুলেটে ছলটার চোখটা নষ্ট হওয়ার পথে। সারা শরীরে অসংখ্য রাবার বুলেট লাগছে। ছলটা উঠে আর দাঁড়াতেও পারছে না। ওর আয় দিয়েই আমাদের পরিবারটা চলত। এখন যে কী হবে বুঝতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তার যেভাবে বলেছেন, তাতে ওর চোখটা ভালো হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। উন্নত চিকিৎসা করালে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা রয়েছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। কেউ ছলটার খোঁজখবর নিচ্ছে না। আমি বড় অসহায় হয়ে পড়েছি।’ এসময় সনজুর চিকিৎসায় সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

গত ৪ আগস্ট সারাদেশের মতো গাইবান্ধায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল। একপর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডিসি অফিসের সামনে গেলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ যৌগভাবে অতর্কিতভাবে হামলা করে। তারা ইটপাটকেল, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এতে আহত হন অন্তত ৫০০ জন।

এ এইচ শামীম/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল bdnewspost.com লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

তিনটি বুলেট লাগে সনজুর চোখে, দৃষ্টি হারানোর শঙ্কা

আপডেট সময় : ০৪:৪৭:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে সারাদেশ যখন উত্তাল, তখন বিবেকের তাড়নায় প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন গাইবান্ধা সদর খোলাহাটি ইউনিয়নের সনজু মিয়া (২৬)। একপর্যায়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগও করেন। চলে যান ভারতে। এ খবরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন ছাত্র-জনতা। আনন্দ মিছিল সহকারে নেমে আসেন রাস্তায়। তবে সেই আনন্দ মিছিলে শরিক হতে পারেননি সনজু মিয়া। চোখ হারানোর শঙ্কা ও সারা শরীরে বুলেটের ক্ষতের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন তিনি।

উপজেলার মিয়া পাড়ার বাসিন্দা ইয়াসিন মিয়ার তিন সন্তানের মধ্যে বড় সনজু ছিলেন পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সংসারের হাল ধরার জন্য শহরের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করে পরিবারকে সাধ্যমতো সাহায্য করে আসছিলেন। কিন্তু তার জীবনে নেমে এসেছে এক ভয়াবহ বিপর্যয়।

সরেজমিন দেখা যায়, গাইবান্ধা শহরের প্রাইম হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টি সেন্টারের চিকিৎসা নিচ্ছেন সনজু। বাম চোখের ভেতর লাল হয়ে আছে। সারা শরীরের অসংখ্যা বুলেটের দাগ। তার মা বসে আছেন পাশে। শরীরের পাশ পরিবর্তন করতে পারছিলেন না। কথা বলার সময় তার শরীর কাঁপছিল। ভয় যেন তার অন্তর থেকে এখনো কাটেনি।

গত ৪ আগস্ট গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে একটি মিছিলে অংশ নিয়ে আহত হন সনজু মিয়া। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের অতর্কিত হামলায় তার বাম চোখে তিনটি এবং হাতে একটি রাবার বুলেট লাগে। গুরুতর আহত হয়ে সনজু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা তাকে দ্রুত গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রংপুরের গ্লোবাল আই অ্যান্ড হেলথ কেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে দুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সনজুকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বাংলাদেশ আই হসপিটালে পাঠানো হয়।

আই হসপিটালে সনজুর চোখ থেকে একটি রাবার বুলেট সফলভাবে অপসারণ করা সম্ভব হলেও বাকি দুটি বুলেট এখনো চোখের ভেতরে রয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তবে সনজুর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, যা দরিদ্র এই পরিবারের পক্ষে বহন করা অসম্ভব।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আহত সনজু মিয়া বলেন, ‘পুলিশ গুলি চালিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছিল, যাদের কোনো দোষ ছিল না। আমি সহ্য না করতে পেরে ৪ তারিখে ছাত্রদের মিছিলে যাই। হত্যার বিচার আর হাসিনার গদি থেকে নামানোর মিছিলে। মিছিলটি গাইবান্ধা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে গেলে পুলিশ অতর্কিতভাবে গুলি শুরু করে। গুলি লাগার পর বুঝতে পারি চোখে কিছু একটা লেগেছে। পরে লোকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। আমার বাম চোখে তিনটি রাবার বুলেট লাগে। ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে একটি রাবার বুলেট অপসারণ করা হলেও বাকি দুটি এখনো রয়ে গেছে। আমি বাম চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পারছি না। প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছি। এই চোখ দিয়ে আদৌ দেখতে পারবো কিনা জানি না!’

সনজুর মা মনজু রানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশের রাবার বুলেটে ছলটার চোখটা নষ্ট হওয়ার পথে। সারা শরীরে অসংখ্য রাবার বুলেট লাগছে। ছলটা উঠে আর দাঁড়াতেও পারছে না। ওর আয় দিয়েই আমাদের পরিবারটা চলত। এখন যে কী হবে বুঝতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তার যেভাবে বলেছেন, তাতে ওর চোখটা ভালো হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। উন্নত চিকিৎসা করালে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা রয়েছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। কেউ ছলটার খোঁজখবর নিচ্ছে না। আমি বড় অসহায় হয়ে পড়েছি।’ এসময় সনজুর চিকিৎসায় সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

গত ৪ আগস্ট সারাদেশের মতো গাইবান্ধায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল। একপর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডিসি অফিসের সামনে গেলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ যৌগভাবে অতর্কিতভাবে হামলা করে। তারা ইটপাটকেল, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এতে আহত হন অন্তত ৫০০ জন।

এ এইচ শামীম/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল bdnewspost.com লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।