[ad_1]
মানুষের সমাজ নানা বিভাজনে পূর্ণ—ধর্ম, জাতীয়তা ও মতাদর্শের। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য সেটি সত্য নয়। মানুষ বিশ্রাম নেয়, কিন্তু এআই টুলগুলো অবিরাম কাজ করে যায়। ইতিহাস বলে, মানুষ কখনোই তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করেনি। ছাপাখানা আবিষ্কারের পর যেসব বই খুব বেশি বিক্রি হয়েছিল, সেগুলো প্লেটো বা অ্যারিস্টটলের লেখা দর্শনের বই নয়, বরং জার্মান ক্যাথলিক ধর্মগুরু হেইনরিখ ক্র্যামারের দ্য হ্যামার অব উইচেস নামের বই, যা আসলে ‘ডাইনি’ বলে নারীদের হত্যাকে জায়েজ করার পক্ষে লেখা এক গ্রন্থ। একইভাবে এই সময়ে ইন্টারনেট সবার হাতের নাগালে আসার পর মানুষ যতটা জ্ঞান–বিজ্ঞানের প্রসারের জন্য তাকে ব্যবহার করেছে, তার চেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে ভয়, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াতে। যেহেতু মানুষের বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া যাবে না, তাই জেনোফোবিক, হোমোফোবিক কিংবা বর্ণবাদী বক্তব্য যে বা যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁদের ব্লক বা নিষিদ্ধ করার আগে এ ধরনের বক্তব্যগুলো কেন ছড়াচ্ছেন কিংবা কী উদ্দেশ্যে অ্যালগরিদম এসব কনটেন্টকেই সামনে আনে, সেটি বুঝতে হবে। লক্ষ করুন, অ্যালগরিদমের কিন্তু বাক্স্বাধীনতা নেই, তার তা দরকারও নেই। এটি কাজ করে মানুষের আগ্রহের বিষয় বিশ্লেষণ করে। অ্যালগরিদম জেনে গেছে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করার মূল তরিকা কী। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ নানা রকম ভয়ভীতি দিয়ে তাড়িত ছিল। নিজস্ব চিন্তাভাবনার ক্ষমতা না থাকলেও মানুষের মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে যেহেতু এআইয়ের সম্যক ধারণা আছে, তাই এটি ঘৃণা, বিদ্বেষ ও ভয় ছড়াতেই বেশি ব্যস্ত, এতে বেশি মনোযোগও পাওয়া যায়। আবার মানুষের দুর্বলতাগুলো সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হয়ে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তাদের আবেগ ও মনস্তত্ত্ব নিয়ে খেলা করার জন্য, তাদের বিশ্বাস–অবিশ্বাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য যেটুকু বুদ্ধিমত্তা থাকা দরকার, সেটুকু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইতিমধ্যে অর্জন করেছে।
ডিপফেক দিয়ে যেহেতু এখন মানুষের ছবি, কণ্ঠস্বর, এমনকি কথা বলার ভঙ্গি নকল করা যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার নিয়ে আমাদের মনে আর কোনো সন্দেহই থাকার কথা নয়। আমাদের ব্যাংক হিসাব, গোপন নথি, ব্যক্তিগত নথি কিংবা সম্পত্তির দলিল ইত্যাদি নিরাপত্তাঝুঁকির মুখে পড়তেই পারে। আপনি যখন আপনার ব্যাংকে ফোন করেন, ব্যক্তি হিসেবে তারা আপনাকে চেনে আপনার কণ্ঠস্বর দিয়ে। একইভাবে আপনার সম্পত্তির ওপর অধিকার, যা আসলে একটি দলিল বা নথির ওপর নির্ভরশীল, সেটি যদি কোনোমতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে আপনার জীবনকেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেহেতু ভাষা তৈরি করতে পারছে, নতুন ব্যাংকিং প্রযুক্তি, এমনকি নতুনভাবে আইন তৈরিও তারা করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু এমন আইনও আছে, যা বলে, আইনজ্ঞ হওয়ার জন্য কাউকে মানুষই হতে হবে, এমন কোনো শর্ত নেই।
[ad_2]