সরকার পতন ষড়যন্ত্র মামলার আসামির বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যার মামলা!

- আপডেট সময় : ০৬:৩৩:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪ ৫৫ বার পড়া হয়েছে

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশের মতো ঢাকার সাভারেও সরকার পতন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দেড় ডজন মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি ও দলীয় অসংখ্য নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। আশুলিয়া থানায় তিন দিনের ব্যবধানে দায়ের করা এমন দুটি মামলায় সম্পৃক্ত না থাকা সত্ত্বেও এক ব্যবসায়ীকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন আশুলিয়ায় ছাত্রহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে একই ব্যক্তিকে। থানায় করা ওই মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিসহ শতাধিক নেতাকর্মী ছাড়াও আসামি ইসরাফিল হোসেন নামের ওই ব্যক্তি।
ব্যবসায়ী ইসরাফিলের দাবি, আন্দোলনের সময় দেশের বাইরে অবস্থান করলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাকেও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। কয়েকদিন আগেও শত্রুতামূলকভাবে সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মামলার আসামি করা হয়েছে। মূলত ব্যবসায়িক ফয়দা লুটতেই কোনো পক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক এভাবে মিথ্যা মামলা করেছে।
নিজেকে ভুক্তভোগী দাবি করা ব্যবসায়ী ইসরাফিল হোসেন (৩৯) আশুলিয়ার ভাদাইল মধ্যপাড়া এলাকার দেলোয়ার হোসেন দিলুর ছেলে। তিনি ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার একজন ঠিকাদার।
মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন গত ২৬ জুলাই আশুলিয়া থানায় সরকার পতন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পুলিশের কাজে বাধা, মারধর, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি মামলা হয়। ৪৭ নম্বর ওই মামলায় পাঁচ নম্বর আসামি করা হয় ব্যবসায়ী ইসরাফিলকে। ওই মামলার বিএনপির ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু ও ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খানসহ বিএনপির আরও ৪৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটির বাদী আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক সোহেল মোল্লা।
এর তিনদিন পর গত ২৯ জুলাই বিএনপির সাবেক এমপিসহ ৫৪ জন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে আশুলিয়া থানায় আরেকটি মামলা করা হয়। এই মামলায় ব্যবসায়ী ইসরাফিলকে ছয় নম্বর আসামি করা হয়।
এ ঘটনার পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১৭ আগস্ট ব্যবসায়ী ইসরাফিলের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় আবারও একটি মামলা হয়। ওই মামলায় আওয়ামী লীগের ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদকে প্রধান করে শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
নিজেকে ভুক্তভোগী দাবি করা ব্যবসায়ী ইসরাফিল হোসেন বলেন, ‘১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে আমার বাবা একজন বৈধ ঠিকাদার হিসেবে ব্যবসা করতেন। এরপর আমি ছাত্রদলনেতা আইয়ুব খানের সঙ্গে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছি। তবে আমার কোনো পদ-পদবি ছিল না। এরপর ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমার ব্যবসা দখলের জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে আটকে রেখে মামলা দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলকভাবে অন্তত আটটি মামলা করা হয়। তখন হাজতবাসও করতে হয়েছিল আমাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত নির্যাতন সহ্য করার পর সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনের সময় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় আরও দুটি মামলা করা হয়। আমি আওয়ামী লীগ সরকার পতনে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলাটি করা হয় আশুলিয়া থানায়। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন বাবু ও যুবদল নেতা আইয়ুব খান একই মামলার অন্যতম আসামি। অথচ গত ২৪ জুলাই আমি ব্যাংককে পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম। দেশে তখন আন্দোলন হচ্ছে এটুকু জানি আমি। পরে দেশে ফিরে শুনে ২৬ জুলাই আমার নামে একটি মামলা হইছে। এরপর ২৯ জুলাই আমি সিঙ্গাপুরে যাই। আগে থেকেই আমার ওই ভিসা করা ছিল। ওইদিনই জানতে পারি আবারও একই অভিযোগে আশুলিয়া থানায় আরেকটি মামলা করা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। তখন ওসি সাহেবকে বিষয়টি জানালে, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।’
‘এরপর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন আমি সিঙ্গাপুরেই অবস্থান করছিলাম। এরপর মালয়েশিয়া থেকে ৭ আগস্ট দেশে ফিরে জানতে পারি, এবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যার অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হয়েছে আমার নামে।’
একের পর এক মামলা করার কারণ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ইসরাফিল হোসেন বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে থাকা অবস্থায় আমি জানতে পারি আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা জেলা পরিষদের সদস্য এনামুল হক মুন্সি আমার ব্যবসা দখলের চেষ্টা করছেন। ইপিজেডের কারখানায় গিয়ে আমি সেখানে ব্যবসা করতে পারবো না, আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এসব জানায় কর্তৃপক্ষকে। মূলত বিভিন্ন পক্ষ আমার ব্যবসা দখলের জন্যই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে।’
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, বাদীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি রুজু হয়েছে। অভিযোগকারীর বয়ানে কোনো ত্রুটি থাকলে বিশদ তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাহফুজুর রহমান নিপু/এসআর/এমএস