সকালের শক্তি কীভাবে ব্যবহার করবেন
- আপডেট সময় : ০৯:৫৬:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৫৬ বার পড়া হয়েছে
সকালের সময়কে অনেকে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসাবে বিবেচনা করেন। প্রাচীনকাল থেকেই বলা হয়ে আসছে, “সকালে যে দিন শুরু করে, সে ব্যক্তি সফলতা লাভ করে।” কিন্তু কেন সকালের এত গুরুত্ব? বৈজ্ঞানিক তথ্য ও উদাহরণ দিয়ে দেখা যায়, সকালের প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবন, মানসিকতা এবং শারীরিক সুস্থতার ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।
১. সকালের শক্তি: কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?
সকালের সময় হল একটি নতুন শুরু, যখন আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীর সবেমাত্র বিশ্রাম থেকে উঠে আসে। এই সময়ে আমাদের শক্তির স্তর সবচেয়ে উঁচুতে থাকে এবং মনোযোগ ও মনঃসংযোগ করার ক্ষমতা থাকে তুঙ্গে। গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে কাজ করার ফলে মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
• যুক্তরাজ্যের College of Roehampton এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, সকালের দিকে উঠে কাজ শুরু করা ব্যক্তিরা রাতে দেরিতে উঠা ব্যক্তিদের তুলনায় বেশি সুখী এবং সুস্থ থাকেন।
সকালের শক্তি ব্যবহারের জন্য একটি পরিকল্পিত রুটিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সকালের সময়টা শরীর এবং মস্তিষ্ক উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণের মাধ্যমে বোঝা যায়, সকালের সময়টা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে সারাদিনের কাজ আরও ফলপ্রসূ এবং অর্থবহ হয়ে ওঠে।
• অন্য একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, সকালে উঠা ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সকালে উঠে তারা বেশি সৃজনশীল এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সফল হন।
২. সকালের সময়ে শরীরের কর্মক্ষমতা
সকালে উঠে শারীরিক কার্যকলাপ, যেমন ব্যায়াম করা, শরীরের জন্য অসাধারণ উপকারী। গবেষণা অনুযায়ী সকালে শরীরচর্চা করলে আমাদের মেটাবলিজমের হার বৃদ্ধি পায়, যা সারা দিনে ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে। এছাড়া সকালের হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা শরীরকে সতেজ এবং উদ্দীপ্ত করে তোলে।
• American Council on Workout এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সকালে মাত্র ৩০ মিনিটের একটি হাঁটার অভ্যাস সারা দিনে শক্তি এবং মনোযোগ বাড়িয়ে দিতে পারে।
• Stanford College এর একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, সকালের সূর্যের আলো আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে, যা হাড়ের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. মস্তিষ্কের জন্য সকালের গুরুত্ব
মানসিকভাবে সকালের সময় অত্যন্ত উর্বর। Harvard Industry Overview এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, দিনের প্রথম দুই ঘণ্টা হলো মস্তিষ্কের জন্য সোনালী সময়। এই সময়ে মস্তিষ্ক সবচেয়ে প্রফুল্ল থাকে এবং জটিল সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে দক্ষ থাকে।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করতেন। লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে সকাল ৬টা থেকে তার লেখালেখি শুরু করতেন কারণ তিনি মনে করতেন, এই সময় তার চিন্তাশক্তি সবচেয়ে তীক্ষ্ণ থাকে।
৪. সকালের রুটিন: সফলতার চাবিকাঠি
সফল ব্যক্তিদের সকালের রুটিনের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, তারা সকালের সময়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন।
• অ্যাপলের সিইও টিম কুক ভোর ৪:৩০-এ উঠেন এবং তার দিনের কাজ শুরু করেন। তার মতে, সকালের নিরিবিলি সময় তাকে সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল করে তোলে।
• বারাক ওবামা তার প্রেসিডেন্সির সময় প্রতিদিন সকালে এক ঘণ্টা ব্যায়াম করতেন, যা তার দিনের কাজের জন্য মস্তিষ্ক এবং শরীরকে প্রস্তুত করত।
৫. সকালের সময় ধরে রাখার কিছু কৌশল
সকালের শক্তি পুরোপুরি ব্যবহার করার জন্য কিছু কৌশল মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কয়েকটি কৌশল তুলে ধরা হলো:
• আগে ঘুমাতে যাওয়া: শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সকালটা শুরু করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
• পরিকল্পনা করা: প্রতিদিন সকালে ঠিক কী করতে হবে তা আগের রাতে ঠিক করে রাখলে সকালের কাজগুলো আরও দ্রুত এবং ফলপ্রসূ হয়।
• পুষ্টিকর নাস্তা করা: সকালে পুষ্টিকর নাস্তা করা শরীরকে সক্রিয় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, ওটস এবং ফল খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৬. বৈজ্ঞানিকভাবে সকালের প্রভাব
বিজ্ঞান আমাদের বলে যে, সকালে শরীরের কর্টিসল লেভেল সবচেয়ে বেশি থাকে। কর্টিসল আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে, মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। সকালে সূর্যালোক পাওয়ায় শরীরে মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন বন্ধ হয় এবং শরীর জেগে ওঠে।
সকালের শক্তি ব্যবহারের জন্য একটি পরিকল্পিত রুটিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সকালের সময়টা শরীর এবং মস্তিষ্ক উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণের মাধ্যমে বোঝা যায়, সকালের সময়টা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে সারাদিনের কাজ আরও ফলপ্রসূ এবং অর্থবহ হয়ে ওঠে।
বিখ্যাত লেখক হ্যাল এলরডের একটি কোট দিয়ে লেখাটি শেষ করি। তিনি বলেছেন, “Your stage of good fortune will infrequently exceed your stage of private construction, as a result of good fortune is one thing you draw in by means of the individual you turn out to be.” সত্যিই তাই।
লেখক: দি আর্ট অব পার্সোনাল ফাইনান্স ম্যানেজমেন্ট বইয়ের লেখক, কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস স্ট্রাটেজিস্ট।
এইচআর/এএসএম