ঢাকা ০৬:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি/নোটিশ ::
সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||   সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে... আগ্রহীরা সিভি মেইল করুন:  career@bdnewspost.com  ||
সদ্য প্রাপ্ত খবর ::
এসএসসি পদার্থবিজ্ঞান বহুনির্বাচনি প্রশ্ন সমাধান ২০২৪ [ক,খ,গ ও ঘ সেট সব বোর্ড] – এসএসসি ফিজিক্স MCQ সমাধান 2024 PDF bdnewspost.com দাখিল ইংরেজি ১ম পত্র প্রশ্ন সমাধান ২০২৪ PDF মাদ্রাসা বোর্ড bdnewspost.com জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ ৪র্থ সেমিষ্টার পরীক্ষার ফরম পূরণ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫ bdnewspost.com দাখিল আকাইদ ও ফিকহ পরীক্ষার প্রশ্ন ও সমাধান ২০২৫ PDF bdnewspost.com এসএসসি কৃষি শিক্ষা বহুনির্বাচনি প্রশ্ন সমাধান ২০২৫ [ক,খ,গ ও ঘ সেট সব বোর্ড] – এসএসসি কৃষি শিক্ষা MCQ সমাধান 2025 PDF bdnewspost.com SSC Agriculture Research MCQ Query resolution 2025 – Krishi Shikkha Query & Solution 2025 All Board PDF bdnewspost.com বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি IDRA Activity Round 2025 bdnewspost.com রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি EPB Task Round 2025 bdnewspost.com এসএসসি গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বহুনির্বাচনি প্রশ্ন সমাধান ২০২৫ [ক,খ,গ ও ঘ সেট সব বোর্ড] – এসএসসি গার্হস্থ্য বিজ্ঞান MCQ সমাধান 2025 PDF bdnewspost.com পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিমিটেড নিয়োগ PGCB Process Round 2025 bdnewspost.com

ইন্টারনেট আসুক মৌলিক অধিকারের তালিকায়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:২৬:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪ ৭২ বার পড়া হয়েছে


সর্বজনীন মৌলিক অধিকার বিষয়ে সেই ছোট বেলা থেকেই আমরা কম বেশি ধারণা পেয়েছি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা – এই পাঁচটি বিষয়কেই সব সময় তালিকায় রাখা হয়েছে। সেটা তো থাকারই কথা। এ নিয়ে কেউ কখনো দ্বিমত করেনি। তবে নাগরিকের অধিকারের তালিকায় আরো অনেকগুলো বিষয় সব দেশ – সমাজেই আছে। দেশভেদে নানা প্রেক্ষাপটে এসব অধিকারের কিছু ভিন্নতাও দেখা যায়। নাগরিকদের চাহিদা, তাদের প্রতি জানানো সম্মান এবং প্রয়োজনকেই এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

এখনো পর্যন্ত আমাদের বিদ্যমান যে সংবিধান আছেন সেখানেও নাগরিকদের অধিকারের তালিকা আছে। তালিকা খুব ছোট নয়। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কার করার ঘোষণা দিয়েছে। সে লক্ষ্যে কমিটিও গঠিত হয়েছে। এই কমিটি সংবিধান সংশোধন করবে নাকি নতুন করে লিখবে সেটি এখনো চূড়ান্ত নয়। যদিও ইতিমধ্যে কমিটির প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ একাধিকার গণমাধ্যমকে বলেছেন তিনি সংবিধান পুনঃলিখনের পক্ষে। আজকের আলোচনা অবশ্য সেটা নয়। সংবিধান পুনঃলিখন হোক অথবা সংশোধন, যাই হোক না কেনো বিদ্যমান সংবিধানের থাকা নাগরিকদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয় সেখানে থাকবেই। এই কথাটা বলার জন্যে সংবিধান বিশেষজ্ঞ হওয়ার কোনো দরকার নেই।

এখনো আমাদের যে সংবিধান আছে সেখানে আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্মের কারণে বৈষম্য না করা, নারী পুরুষের সমঅধিকার বা সরকারী নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা অথবা আইনের আশ্রয় লাভ অধিকার হিসেবে উল্লেখ আছে। একইভাবে নতুন অথবা সংশোধিত সংবিধানেও এগুলো থাকবে নিশ্চিত। তাছাড়া বিদ্যমান সংবিধানের মতোই জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার, গ্রেপ্তার ও আটকে রক্ষাকবচ বা জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধ – এসব অধিকারও নাগরিকের জন্যে যে নিশ্চিত করা হবে তা হলফ করে বলা যায়। সর্বোচ্চ হয়তো ভাষায় বদল আসতে পারে। কিন্তু অধিকারের তালিকায় এসব বিষয় থাকবে।

তাছাড়া ব্যক্তির চলা ফেরা ও সমাবেশের স্বাধীনতা যেমন এখন সংবিধান স্বীকৃত; তেমনি সংগঠন করার স্বাধীনতা, ইচ্ছামাফিক পেশা নির্বাচন বা ধর্মীয় স্বাধীনতাও সংবিধান নিশ্চিত করেছে। নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন এবং সব কিছুর ওপরে মৌলিক অধিকারবঞ্চিত হলে উচ্চ আদালতে রিট করার অধিকারও সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত।

নাগরিকের অধিকার হিসেবে যখন কোনো বিষয় সংবিধানে উল্লেখ করা হয় তখন সেটি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারেরও দায়িত্বের বিষয়টি আসে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখেই বলছি, গত দুই আড়াই দশকে গোটা বিশ্ব যে জায়গায় পৌঁছে গেছে তাতে ইন্টারনেটকেও এখন এই তালিকায় যুক্ত অবশ্যম্ভাবী দাবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গোটা বিশ্বের বহু দেশে কিন্তু এই উত্তরণ ঘটিয়ে ফেলেছে।

২০১৬ সালেই প্রথম জাতিসংঘ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে। বছর কয়েক আগে যেমন জাতিসংঘের মহাসচিব ‘রোডম্যাপ ফর ডিজিটাল কো-অপারেশন’ প্রকাশ করেন। সেই রূপরেখায় ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য ইন্টারনেট–সেবা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ইন্টারনেট–সেবাপ্রাপ্তিকে মানবাধিকার হিসেবে ধরে নিয়ে এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিজিটাল নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলার কথাও ওই রূপরেখায় বলা হয়েছে।

এটা তো সবাই বোঝেন, যতো বেশি নাগরিককে তথ্য প্রযুক্তির প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা যাবে, ততো বেশি স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে। পরিচ্ছন্ন প্রশাসন, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা আর তারই ধারাবাহিকতায় সুশাসনের নিশ্চয়তা হতে পারে ইন্টারনেটের প্রসার।

বাইডেন সরকারও ২০২১ সালে এ সংক্রান্ত একটি আইন করে ইন্টারনেট সংযোগ ও সেবার ক্ষেত্রে বৈষম্য বিলোপ করেছে। উন্নত বিশ্বের অন্যদের হিসেব না হয় বাদ থাক। আমাদের প্রতিবেশী ভারতের কেরালা হাইকোর্টেও এ সংক্রান্ত একটি রায় আছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দেওয়া রুলিংয়ে কেরালা হাইকোর্ট বলেছে, ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া হবে মৌলিক অধিকার। শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে নাগরিক যে মৌলিক অধিকার ভোগ করেন ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়াও সেই অধিকারের আওতাভুক্ত বলে কেরালা হাইকোর্ট তার রুলিংয়ে বলেছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে – বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি কতোটা জরুরি। উত্তর হল – জরুরি তো অবশ্য; এটি এখন অতিবজরুরি বিষয়। আর সংবিধান যখন বড় রকমের সংশোধন বা পুনঃলিখনের সামনে তখন বর্তমানকে ধরে এবং সামনের দিকে তাকিয়ে ইন্টারনেটকে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। জেন জি এবং জেন এক্স প্রভাবিত বাংলাদেশকে সামনের দিনে তরুণরাই পরিচালনা করবে – সে লক্ষণ স্পস্ট। আর তাদের কাছে যখন ইন্টারনেট খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মতোই প্রয়োজনীয়। আর ইন্টারনেট তো এখন প্রচলিত শিক্ষার বিকল্প। এই প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেট ছাড়া দিন চিন্তা করা যায় কিভাবে?

এমন প্রশ্নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উত্তর হতে পারে গত জুলাই আন্দোলনের ঘটনাক্রম। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের ব্যক্তি-সমাজ এবং অর্থনীতিও যে কতোটা ইন্টারনেট নির্ভর হয়েছে তা এই আন্দোলনের সময়েই সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। আলজাজিরা যেমন ২৩ জুলাই তাদের একটা রিপোর্টে উল্লেখ করেছে আন্দোলনের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের আর্থনীতিতে ১.২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি শুধু ইন্টারনেট কেন্দ্রিক ব্যবসা বন্ধের কারণে নয় নিশ্চিয়ই। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এখানে একটা বড় প্রভাবক।

তাছাড়া ব্যক্তির যাপিতজীবন অথবা তথ্য প্রযুক্তি, সফটওয়্যার এবং আউট সোর্সিংকে সাইড লাইনে রাখলেও আমাদের অর্থনীতির বড় অংশ এখন ইন্টারনেটের ওপর দাঁড়িয়ে। ব্যাংক চলছে ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মের ওপর। শহর কেন্দ্রিক সেবা খাতের বড় অংশ গড়ে উঠেছে ইন্টারনেটকে ভিত্তি ধরে। প্রান্তের গ্রামেও এখন ইন্টারনেট আলো ছড়াচ্ছে।

সব কিছুর পরেও গ্রাহক সংখ্যাটা হয়তো এখনো চার-সাড়ে চার কোটির মধ্যে। এখনো দেশের অধিকাংশ মানুষ ইন্টারনেট সেবার বাইরে। এই ডিজিটাল ডিভাইড দূর করার জন্যেও তো অধিকার হিসেবে সকলের ইন্টারনেট পাওয়ার নিশ্চয়তা জরুরি। অধিকারের প্রশ্নের সমাধান করলেই তখন সেটি নিশ্চিত করা বা বৈষম্য দূর করার বিষয়টি প্রচেষ্টার মধ্যে আসবে।

ইন্টারনেটকে অধিকারের মধ্যে আনা গেলে দেখবেন – ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি তরতরিয়ে বাড়বে। শুধু মোবাইল আর্থিকখাতের প্রসারের কারণে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে চলে এসেছে। এখনো অর্ধেক মানুষ এই হিসেবের বাইরে। এই অবস্থায় ইন্টারনেটের গতি বাকি অর্ধেক মানুষকে অন্তর্ভুক্তির মধ্যে আনতে সহায়তা করবে। আর এটিই হতে পারে দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রধানতম জায়গা। এটা তো সবাই বোঝেন, যতো বেশি নাগরিককে তথ্য প্রযুক্তির প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা যাবে, ততো বেশি স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে। পরিচ্ছন্ন প্রশাসন, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা আর তারই ধারাবাহিকতায় সুশাসনের নিশ্চয়তা হতে পারে ইন্টারনেটের প্রসার।

লেখক: সাংবাদিক ও বিশ্লেষক।

এইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।


নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ইন্টারনেট আসুক মৌলিক অধিকারের তালিকায়

আপডেট সময় : ১০:২৬:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪


সর্বজনীন মৌলিক অধিকার বিষয়ে সেই ছোট বেলা থেকেই আমরা কম বেশি ধারণা পেয়েছি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা – এই পাঁচটি বিষয়কেই সব সময় তালিকায় রাখা হয়েছে। সেটা তো থাকারই কথা। এ নিয়ে কেউ কখনো দ্বিমত করেনি। তবে নাগরিকের অধিকারের তালিকায় আরো অনেকগুলো বিষয় সব দেশ – সমাজেই আছে। দেশভেদে নানা প্রেক্ষাপটে এসব অধিকারের কিছু ভিন্নতাও দেখা যায়। নাগরিকদের চাহিদা, তাদের প্রতি জানানো সম্মান এবং প্রয়োজনকেই এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

এখনো পর্যন্ত আমাদের বিদ্যমান যে সংবিধান আছেন সেখানেও নাগরিকদের অধিকারের তালিকা আছে। তালিকা খুব ছোট নয়। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কার করার ঘোষণা দিয়েছে। সে লক্ষ্যে কমিটিও গঠিত হয়েছে। এই কমিটি সংবিধান সংশোধন করবে নাকি নতুন করে লিখবে সেটি এখনো চূড়ান্ত নয়। যদিও ইতিমধ্যে কমিটির প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ একাধিকার গণমাধ্যমকে বলেছেন তিনি সংবিধান পুনঃলিখনের পক্ষে। আজকের আলোচনা অবশ্য সেটা নয়। সংবিধান পুনঃলিখন হোক অথবা সংশোধন, যাই হোক না কেনো বিদ্যমান সংবিধানের থাকা নাগরিকদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয় সেখানে থাকবেই। এই কথাটা বলার জন্যে সংবিধান বিশেষজ্ঞ হওয়ার কোনো দরকার নেই।

এখনো আমাদের যে সংবিধান আছে সেখানে আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্মের কারণে বৈষম্য না করা, নারী পুরুষের সমঅধিকার বা সরকারী নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা অথবা আইনের আশ্রয় লাভ অধিকার হিসেবে উল্লেখ আছে। একইভাবে নতুন অথবা সংশোধিত সংবিধানেও এগুলো থাকবে নিশ্চিত। তাছাড়া বিদ্যমান সংবিধানের মতোই জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার, গ্রেপ্তার ও আটকে রক্ষাকবচ বা জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধ – এসব অধিকারও নাগরিকের জন্যে যে নিশ্চিত করা হবে তা হলফ করে বলা যায়। সর্বোচ্চ হয়তো ভাষায় বদল আসতে পারে। কিন্তু অধিকারের তালিকায় এসব বিষয় থাকবে।

তাছাড়া ব্যক্তির চলা ফেরা ও সমাবেশের স্বাধীনতা যেমন এখন সংবিধান স্বীকৃত; তেমনি সংগঠন করার স্বাধীনতা, ইচ্ছামাফিক পেশা নির্বাচন বা ধর্মীয় স্বাধীনতাও সংবিধান নিশ্চিত করেছে। নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন এবং সব কিছুর ওপরে মৌলিক অধিকারবঞ্চিত হলে উচ্চ আদালতে রিট করার অধিকারও সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত।

নাগরিকের অধিকার হিসেবে যখন কোনো বিষয় সংবিধানে উল্লেখ করা হয় তখন সেটি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারেরও দায়িত্বের বিষয়টি আসে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখেই বলছি, গত দুই আড়াই দশকে গোটা বিশ্ব যে জায়গায় পৌঁছে গেছে তাতে ইন্টারনেটকেও এখন এই তালিকায় যুক্ত অবশ্যম্ভাবী দাবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গোটা বিশ্বের বহু দেশে কিন্তু এই উত্তরণ ঘটিয়ে ফেলেছে।

২০১৬ সালেই প্রথম জাতিসংঘ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে। বছর কয়েক আগে যেমন জাতিসংঘের মহাসচিব ‘রোডম্যাপ ফর ডিজিটাল কো-অপারেশন’ প্রকাশ করেন। সেই রূপরেখায় ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য ইন্টারনেট–সেবা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ইন্টারনেট–সেবাপ্রাপ্তিকে মানবাধিকার হিসেবে ধরে নিয়ে এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিজিটাল নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলার কথাও ওই রূপরেখায় বলা হয়েছে।

এটা তো সবাই বোঝেন, যতো বেশি নাগরিককে তথ্য প্রযুক্তির প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা যাবে, ততো বেশি স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে। পরিচ্ছন্ন প্রশাসন, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা আর তারই ধারাবাহিকতায় সুশাসনের নিশ্চয়তা হতে পারে ইন্টারনেটের প্রসার।

বাইডেন সরকারও ২০২১ সালে এ সংক্রান্ত একটি আইন করে ইন্টারনেট সংযোগ ও সেবার ক্ষেত্রে বৈষম্য বিলোপ করেছে। উন্নত বিশ্বের অন্যদের হিসেব না হয় বাদ থাক। আমাদের প্রতিবেশী ভারতের কেরালা হাইকোর্টেও এ সংক্রান্ত একটি রায় আছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দেওয়া রুলিংয়ে কেরালা হাইকোর্ট বলেছে, ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া হবে মৌলিক অধিকার। শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে নাগরিক যে মৌলিক অধিকার ভোগ করেন ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়াও সেই অধিকারের আওতাভুক্ত বলে কেরালা হাইকোর্ট তার রুলিংয়ে বলেছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে – বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি কতোটা জরুরি। উত্তর হল – জরুরি তো অবশ্য; এটি এখন অতিবজরুরি বিষয়। আর সংবিধান যখন বড় রকমের সংশোধন বা পুনঃলিখনের সামনে তখন বর্তমানকে ধরে এবং সামনের দিকে তাকিয়ে ইন্টারনেটকে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। জেন জি এবং জেন এক্স প্রভাবিত বাংলাদেশকে সামনের দিনে তরুণরাই পরিচালনা করবে – সে লক্ষণ স্পস্ট। আর তাদের কাছে যখন ইন্টারনেট খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মতোই প্রয়োজনীয়। আর ইন্টারনেট তো এখন প্রচলিত শিক্ষার বিকল্প। এই প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেট ছাড়া দিন চিন্তা করা যায় কিভাবে?

এমন প্রশ্নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উত্তর হতে পারে গত জুলাই আন্দোলনের ঘটনাক্রম। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের ব্যক্তি-সমাজ এবং অর্থনীতিও যে কতোটা ইন্টারনেট নির্ভর হয়েছে তা এই আন্দোলনের সময়েই সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। আলজাজিরা যেমন ২৩ জুলাই তাদের একটা রিপোর্টে উল্লেখ করেছে আন্দোলনের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের আর্থনীতিতে ১.২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি শুধু ইন্টারনেট কেন্দ্রিক ব্যবসা বন্ধের কারণে নয় নিশ্চিয়ই। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এখানে একটা বড় প্রভাবক।

তাছাড়া ব্যক্তির যাপিতজীবন অথবা তথ্য প্রযুক্তি, সফটওয়্যার এবং আউট সোর্সিংকে সাইড লাইনে রাখলেও আমাদের অর্থনীতির বড় অংশ এখন ইন্টারনেটের ওপর দাঁড়িয়ে। ব্যাংক চলছে ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মের ওপর। শহর কেন্দ্রিক সেবা খাতের বড় অংশ গড়ে উঠেছে ইন্টারনেটকে ভিত্তি ধরে। প্রান্তের গ্রামেও এখন ইন্টারনেট আলো ছড়াচ্ছে।

সব কিছুর পরেও গ্রাহক সংখ্যাটা হয়তো এখনো চার-সাড়ে চার কোটির মধ্যে। এখনো দেশের অধিকাংশ মানুষ ইন্টারনেট সেবার বাইরে। এই ডিজিটাল ডিভাইড দূর করার জন্যেও তো অধিকার হিসেবে সকলের ইন্টারনেট পাওয়ার নিশ্চয়তা জরুরি। অধিকারের প্রশ্নের সমাধান করলেই তখন সেটি নিশ্চিত করা বা বৈষম্য দূর করার বিষয়টি প্রচেষ্টার মধ্যে আসবে।

ইন্টারনেটকে অধিকারের মধ্যে আনা গেলে দেখবেন – ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি তরতরিয়ে বাড়বে। শুধু মোবাইল আর্থিকখাতের প্রসারের কারণে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে চলে এসেছে। এখনো অর্ধেক মানুষ এই হিসেবের বাইরে। এই অবস্থায় ইন্টারনেটের গতি বাকি অর্ধেক মানুষকে অন্তর্ভুক্তির মধ্যে আনতে সহায়তা করবে। আর এটিই হতে পারে দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রধানতম জায়গা। এটা তো সবাই বোঝেন, যতো বেশি নাগরিককে তথ্য প্রযুক্তির প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা যাবে, ততো বেশি স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে। পরিচ্ছন্ন প্রশাসন, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা আর তারই ধারাবাহিকতায় সুশাসনের নিশ্চয়তা হতে পারে ইন্টারনেটের প্রসার।

লেখক: সাংবাদিক ও বিশ্লেষক।

এইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।